প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ওই বাড়ি হস্তান্তর করবেন। তিন জেলার তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরাসরি যুক্ত হবেন সরকারপ্রধান। সেগুলো হলো- গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া, সিলেটের গোয়াইনঘাটের নন্দিরগাও ইউনিয়নের নওয়াঁগাও ও বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সামগ্রিক প্রস্তুতি দেখতে । সিলেট সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম গোয়াইনঘাটের নওয়াগাঁও। অবহেলিত ওই এলাকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কল্যাণে উন্নয়নের মূলস্রোতে উঠে এসেছে
গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা সড়কে দেওয়া হচ্ছে ইটের সলিং। পাকা সড়ক থেকে এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। কেউ মাটি সমান করছেন, কেউ খানাখন্দ ভরাট করছেন। আবার কেউ ব্যস্ত ইট বিছানো ও তার ওপর ধুলোর প্রলেপ দেওয়ার কাজে।
সংস্কারাধীন সড়কটি পেরিয়ে দেখা মেলে দৃষ্টিনন্দন গুচ্ছগ্রামের। রঙিন টিনের ছাউনি আর পাকা দেয়ালের সারি সারি সেমিপাকা ঘর। সামনে বিশাল পুকুর, পেছনে খাল। চারদিকে সুন্দর সড়ক। বিশাল আকৃতির একাধিক পানির ট্যাংকিও চোখে পড়ে। পুরো এলাকায় চলছে নির্মাণযজ্ঞ। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ১০০ ঘরের মাঝেই রয়েছে বড় মাঠ। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজনে চলছে যাবতীয় প্রস্তুতি।
গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন বাড়ি উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। একেকটি বাড়ি, তাদের একেক জনের মধ্যে নতুন স্বপ্ন জাগিয়েছে। যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, সেখানে সবই পেয়েছেন তারা। ৮২৬ নম্বর ঘর পেয়েছেন লোকমান হোসেন। দিনমজুরদের সঙ্গে তিনিও সড়ক মেরামতের কাজ করছেন। তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, এখানে ১০০টি ঘর হলেও আমরা দুই একর জমি বন্দোবস্ত দিচ্ছি। তবে পুরো প্রকল্পের এলাকা হচ্ছে পাঁচ একর ৩৬ শতাংশ জায়গায়। এ প্রকল্পের মানুষ একইসঙ্গে পুকুর ও খাল পাচ্ছে। খালি জায়গায় তাদের জন্য কৃষি প্লট করেছি। এক হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। একইসঙ্গে তারা যাতে মৌসুমি সবজি চাষ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের খালের পানির বদৌলতে পতিত জমিও চাষাবাদের আওতায় এসেছে। কাজটি আমরা এমনভাবে করেছি যে, এখানে পুরোপুরি নতুন একটি সভ্যতা গড়ে উঠছে।
গৃহহীনদের সরকার সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে দুই শতক জমিসহ ঘর করে দিচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে একই বছরের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে গত বছরের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, দ্বিতীয় ধাপে ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর করা গৃহের সংখ্যা দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন গৃহের সংখ্যা ২২ হাজার ছয়টি। চতুর্থ পর্যায় পর্যন্ত বরাদ্দকৃত গৃহের সংখ্যা দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি। চতুর্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা এক হাজার ৩৭৩টি ও পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় সর্বমোট এক হাজার ১০১টি ঘর নির্মাণ করেছি। এরইমধ্যে ৮৯৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আর ১২৪টি ঘর বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মাণাধীন। খুব দ্রুত এগুলো হস্তান্তর হবে।
প্রকল্পের পুরো জায়গা ভূমিদস্যুদের দখলে ছিল জানিয়ে ইউএনও বলেন, ‘মামলা-মোকদ্দমার মোকাবিলা করে আমরা এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। এটি একটি বন্যাকবলিত এলাকা। সেই বিষয়টিও মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। টেকসই ঘর নির্মাণ করার জন্য কোনো অংশেই আমরা ছাড় দেইনি। ঘরগুলো যাতে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়ে সেজন্য অতিরিক্ত কাজ করে দিয়েছি। সম্প্রতি বন্যায় যেসব মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন, নিঃস্ব হয়েছেন, তাদেরই এখানে ঘর বরাদ্দ দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস রানা বলেন, গত বছর ঈদুল ফিতরের আগেও প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঈদ উপহার হিসেবে নতুন বাড়ি দিয়েছিলেন। এবারও রোজার আগে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের কাছে দুই শতক জমিসহ নতুন বাড়ি দিচ্ছেন। প্রস্তুতি দেখতে এসে উপকারভোগীদের মাঝে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখলাম, এটিই যেন আরেক ঈদ। প্রধানমন্ত্রী মূলত এটিই দেখতে চান। তিনি সব সময় বলেন, ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে, সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।