প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশনের বিবৃতি
আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করেছে। গত ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার প্রকাশিত সংশোধিত গেজেটে ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগবিধিতে যুক্ত করা সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার দুটি পদ বাতিল করা হয়েছে—যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক গভীর পশ্চাৎমুখী ও অগ্রগতি-বিরোধী সিদ্ধান্ত।
সঙ্গীত-শিল্প-সংস্কৃতি ও শারীরিক শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়—বরং একটি শিশুর সুস্বাস্থ্য, মানবিক, নৈতিক ও সৃজনশীল মানসিক বিকাশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান। বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা নীতিতে সৃজনশীলতা, শারীরিক দক্ষতা ও মননশীলতা গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এমনকি তুরস্ক, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিশরের মত ইসলামিক আদর্শের দেশগুলোতেও শিশুদের সঙ্গীত শিক্ষার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। অথচ আমরা উল্টো পথে হাঁটছি—যেখানে অজ্ঞতা, সংকীর্ণতা ও চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর দাবিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
ধানের দেশ, গানের দেশ, বাউলের দেশ বাংলাদেশ। আবহমান বাংলার প্রাণ প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত আছে সঙ্গীত। কবিতায় আছে- "গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা"। প্রযুক্তিগত ব্যাপক চাপের এই যুগে সঙ্গীতসহ অন্যান্য সংস্কৃতিচর্চা ও শারীরিক বিভিন্ন অনুশীলন মানুষের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
কোনো ধর্মীয় বা মতাদর্শিক চাপে- যে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, তা সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতা, সাংস্কৃতিক অধিকার ও শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশের নীতি সরাসরি লঙ্ঘন করে। শিক্ষা নীতির সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাতত্ত্ব, শিক্ষাকৌশল, শিক্ষাপদ্ধতি ও সামাজিক মানদণ্ডে নির্ধারিত হওয়া উচিত—সংকীর্ণ মত বা সংগঠিত চাপের ভিত্তিতে নয়।
আমরা দাবি জানাই—
• সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা সহকারী শিক্ষক পদ অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে।
• শিশুদের শিক্ষা নীতিকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা গোষ্ঠীগত চাপমুক্ত রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
• প্রাথমিক শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানবিক, বিজ্ঞানসম্মত ও সৃজনশীল শিক্ষার পথেই এগিয়ে নিতে হবে।
• শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ—তাদের শিক্ষা সংকীর্ণতা ও অপবিকাশের দিকে নয়, মানবিক-সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরিচালিত করতে হবে।
আমরা, বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাতিলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই এবং দ্রুত পুনর্বিবেচনাপূর্বক পুনর্বহালের জোর দাবি জানাই।