ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে লন্ডনে প্যালেস অব ওয়েস্টমিনিস্টারে রানির মরদেহে শ্রদ্ধা জানান সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রয়াত রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেস হলে রাখা মরদেহের কাছে এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট শেখ রেহানা।
এর আগে, ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেস হলে পৌঁছালে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের স্পিকারের একজন প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
এ সময় ওয়েস্টমিনিস্টার হলে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম।
রানির মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ল্যাংকাস্টার হাউজে যান। সেখানে রানির সম্মানে খোলা শোক বইয়ে তিনি সই করেন।
ল্যাংকাস্টার হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিকিফোর্ড।
শোক বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলায় শোকবার্তা লেখেন। রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক বইয়ে শেখ হাসিনা লেখেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ, আমার পরিবার ও আমার ছোট বোন রেহানার পক্ষ থেকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। ’
প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও শোক বইয়ে সই করেন। শেখ রেহানা লেখেন, তিনি ছিলেন আমাদের হৃদয়ের রানি এবং তিনি সব সময় তা থাকবেন।
পরে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা যখন রানির মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন তখন তাদের অশ্রুসজল হতে দেখা গেছে।
সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, তারা দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলেন। রানি উনাদের দুই বোনকে খুব ভালো বাসতেন। একজনকে দেখলে আরেকজনের কথা জিজ্ঞেস করতেন।
হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জানান, ল্যাংকাস্টার হাউজে শোক বইয়ে সইয়ের সময় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিকি ফোর্ডের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৮/৯ বার সাক্ষাৎ হয়েছে।
সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, ভিকি ফোর্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবারই রানি আমাকে ফার্স্ট নেইমে চিনতেন (হাসিনা নামে চিনতেন)। সব সময় উনি আমাকে নাম ধরে ডেকে জিজ্ঞেস করতেন হাসিনা কোথায়। যখনই কমনওয়েলথ সামিট হতো জিজ্ঞেস করতেন আমি এসেছি নাকি। এই যে রানির সঙ্গে সম্পর্ক এটা ছিল খুব ব্যক্তিগত।
হাই কমিশনার জানান, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার (মরদেহ) দেখে খুব খারাপ লেগেছে। যেন আমার মায়ের মতো কেউ চলে গেল। অনেক বড় একজন অভিভাবক মনে হয় চলে গেলেন। রানি ছিলেন মাতৃতুল্য ব্যক্তিত্ব। রানি বৈশ্বিক একজন অভিভাবক ছিলেন, কিন্তু চলে গেলেন। একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, ৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ব্যালমোরাল প্রাসাদে সত্তর বছর রাজত্ব করা ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাজশাসক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহন করেন।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেবেন লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।
এর আগে, ব্রিটেনের রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।