ফতুল্লা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় ড্রামের মধ্যে অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। একই সাথে উন্মোচিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য। পুলিশ জানিয়েছে, সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া মো. নয়ন (৪৯) নামের ওই ব্যক্তিকে পরকীয়ার জেরে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করেছিল। অত:পর মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ফতুল্লার উত্তর শিয়াচর মাওয়া মার্কেটের পেছনের একটি নির্জন স্থান থেকে ড্রামের ভেতর বন্ধ অবস্থায় থাকা নয়নের লাশটি উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, অদ্য দুপুর আনুমানিক ২টা ঘটিকার সময় ফতুল্লা থানাধীন উত্তর শিয়ারচরে অর্ধগলিত ও দুই পা কাটা অবস্থায় ড্রামের ভেতর লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। ফতুল্লা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটি উদ্ধার করে এবং তার পরিচয় সনাক্ত করার চেষ্টা চালায়। অবশেষে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। নিহত ব্যক্তির নাম মো. নয়ন (৪৯)। তিনি ফতুল্লার কুতুবপুর ৮ নং ওয়ার্ডের পিলকুনি এলাকার বাসিন্দা মোঃ সালাম ও আয়েশা বেগমের ছেলে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে, নিহত নয়ন দুটি বিয়ে করেছিলেন। পুলিশ ধারণা করছে, নয়নের দ্বিতীয় স্ত্রীর পরকীয়ার কারণেই অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা নয়নকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে গুম করার চেষ্টা করে। ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) আনোয়ার হোসেন এই বিষয়ে বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ করেছিলাম। লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে লাশ উদ্ধারের ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা (৪০), তার দুই মেয়ে সুমনা (২০), সানজিদা (১৮), সাবিনার পরকিয়া প্রেমিক রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল (৪৫) ও সহযোগী চয়ন (৪০) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাদক কারবারি নয়ন জেলে থাকার সুবাধে রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেলের সাথে পরকীয়ায় জড়ান সাবিনা। জেল থেকে বের হয়ে ঘটনা জানাজানি হলে নয়নকে খুনের পরিকল্পনা করেন সাবিনা ও রাসেল। সে অনুযায়ী নয়নকে খুন করে লাশ ড্রামে লুকিয়ে রাখেন তারা। কিন্ত পা দুটি ড্রামের ভেতর রাখতে সমস্যা হওয়ায় কেটে ফেলে বিচ্ছিন্ন পা অন্যত্র ফেলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ঠোঙ্গা রাসেলকে গ্রেফতার করেছে। পরে রাসেলের স্বীকারোক্তি মতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার জালকুড়ি দশ পাইপ এলাকা থেকে সাবিনা, তার দুই মেয়ে সুমনা, সানজিদা এবং হত্যার সাথে জড়িত চয়নকে গ্রেফতার করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নয়নের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, গাড়ি ছিনতাইসহ নানা অপরাধে ৮-১০টি মামলা রয়েছে। ৩-৪ বছর আগে নয়ন হেরোইনসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ওই মামলায় নয়নের সাজা হয়। নিহত নয়নের প্রথম স্ত্রী সাহিদা ফতুল্লার পিলকুনি এলাকার বাসিন্দা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ফতুল্লার ব্যাংক কলোনী এলাকায় বসবাস করেন। ৪-৫ বছর আগে নয়ন সাবিনাকে বিয়ের পর প্রথম স্ত্রীর সাথে তার দূরত্ব বেড়ে যায়। ফতুল্লা মডেল থানার এসআই রেহানুল ইসলাম বলেন, ঝোপের ভেতরে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ড্রাম এবং এর ভেতর থেকে পঁচা গন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রামের মুখ খুলে পলিথিনে মোড়ানো লাশ উদ্ধার করে। তবে লাশের দুটি পা ছিল না। পুলিশ বিচ্ছিন্ন পা দুটির সন্ধান করছে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেন, উদ্ধার হওয়া লাশটি মাদক কারবারি মো: নয়নের। তিনি গত ৮-১০ দিন আগে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে হত্যার শিকার হন। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। খুনের মোটিভ উদ্ধার এবং হত্যায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতার ও লাশের বিচ্ছিন্ন পা দুটি উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।