নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইর রাবেয়া স্কুলের পশ্চিমপার্শ্বে রেললাইন এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ি শামীম (৩০) কে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার নেপথ্যে রয়েছে মাদক স্পটের টাকা উত্তোলন। শামীমের সহযোগি জামাল ও তার মা তানিয়াকে আটকে রাখে প্রতিপক্ষ রাজ্জাক বাহিনী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় শামীম। এরপরই রাজ্জাক বাহিনীর নৃসংশতার শিকার হয় শামীম।
জামাল বলেন, একটি পত্রিকায় মাদক নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সে সকল অভিযোগ শামীমের উপর তুলে দেয় রাজ্জাক। এ সময় রাজ্জাকের নেতৃত্বে জসিম, জাকির, আলম, মহসিন, আলী ওরফে পাঠা আলী, শান্ত, রায়হান ও রাজ্জাকের পুত্র ওয়াসিম প্রায় ১৪/১৫ জন মিলে আমাকে ও শামীমকে তার ভাংগারী দোকানে ঢুকিয়ে সার্টার লাগিয়ে দেয়। এ সময় শামীমের সঙ্গে ওদের ধস্তাধস্তির ফাঁকে আমি দোকান থেকে বের হয়ে যাই। তারপর আমাকে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেছে। শামীমকে বাচাঁতে চিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। জামাল আরো জানান, রাজ্জাকের নেতৃত্বে শামীমকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
জামালের মা তানিয়া বেগম জানান, তার ছেলে জামালের চাষাঢ়া রেলস্টেশন এলাকায় চায়ের দোকান রয়েছে। দুইদিন আগে সেখানে মাদকের স্পটে মাদক বিক্রি করতে নিষেধ করায় রাজ্জাক গ্রুপের সঙ্গে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে জামালকে মারধর করে। পরে তিনি বাঁধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার তিনি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে রাজ্জাক ও তার অনুগামীরা বুধবার সকালে তার ছেলে জামালকে ডেকে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এসময় জামালকে দিয়ে আমাকেও বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। আমি এসে দেখতে পাই আমার ছেলে জামালকে ভাঙ্গারীর দোকানে আটকে মারধর করা হচ্ছে। এসময় আমি কাকুতি মিনতি করলেও রাজ্জাক বাহিনী শোনেনি। আমাকেও শেকল দিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এসময় শামীম আসলে তাকেও আটকে রাজ্জাক বাহিনী বলে, তোর কারণেই জামাল ও তার মাকে আটকেছিলাম। নইলে তো তুই আসতি না। এই কথা বলেই তারা শামীমকে এলোপাথারি কোপাতে থাকে।
শামীমের সঙ্গে শত্রæতার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মিলন মাদকের স্পট চালাতো। রাজ্জাক তখন ৫০-৬০ হাজার টাকা আনতো। সেই স্পট নিয়ে নাকি শামীমের সঙ্গে রাজ্জাক বাহিনীর বিরোধ ছিল বলে শুনেছি।
জামালের স্ত্রী স্বপ্না বেগম জানান, আমার স্বামী জামালের দোকানের পাশেই রাজ্জাক ও তার লোকজন হিরোইন ও গাজার স্পট চালু করেছে। আমার স্বামী সেখানে মাদক বিক্রি করতে বাধা দেওয়ায় তাকে মারধর করতে থাকে। আমার শাশুড়ি খবর পেয়ে ছুটে গেলে তাকেও আটকে রেখে মারধর করে। পরে শামীম আমার স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে শামীমকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত শামীমের পিতা আলমগীর হোসেন জানান, কি কারণে শামীমকে হত্যা করা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। তিনি খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন।
শামীমের স্ত্রী শর্মী জানান, দুপুর সাড়ে ১২টায় কোন একজন ফোন করে জানান তোমার স্বামীকে রাজ্জাকের ভাঙ্গারীর দোকানে রাজ্জাকসহ কয়েকজন মিলে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেছি। এদিকে শামীমের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক সহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
অপরদিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজ্জাকের ছেলে ওয়াসিমকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে তার উপর চড়াও হয় শামীমের স্বজন ও সমর্থকরা। এতে ওয়াসিমকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ভ্যানে চড়ে বসে তারা। পুলিশের তৎপরতা ওয়াসিমের বহনকরা গাড়ী দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে আলী ওরফে পাঠা আলী নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ জুন চাষাঢ়ায় রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাতে মাদকের স্পট নিয়ে বিরোধে রাজমিস্ত্রী রুবেল হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। চাষাঢ়ায় রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাতে মাদকের একটি স্পট পরিচালনা করতো মানিক ও শামীম গ্রুপ। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই স্পট নিয়ন্ত্রণ করতো। তৎকালে স্পটটিতে ভাগ বসাতে শুরু করে ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার জুয়েল ও সোহাগ গ্রুপ। ওই স্পটটি নিয়ন্ত্রণ করা নিয়েই শামীমের সঙ্গে রাজ্জাক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল।
নিহত শামীম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার পাড়াগাও গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে। সে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুড় বাড়ী ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার শহীদ হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকে। নিহত শামীম জেলা কারাগারে আটক ফতুল্লা থানার তালিকাভুক্ত দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার শহিদ হোসেন ওরফে ডাকাত শহিদের জামাতা। নিহত শামীম তার স্ত্রীসহ দু বছর পূর্বে দুই হাজার পিছ ইয়াবা নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেফতার হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, শামীম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওয়াসিম ও আলী নামের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।