ফতুল্লা প্রতিনিধি।।নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ইউনিয়নের লালপুর এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুটি সড়ক। বছরজুড়ে সড়ক দুটিতে হাঁটু পানি জমে থাকে।এলাকাবাসীকে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। ময়লা ও দুর্গন্ধে যেন একাকার সড়ক দুটি।
পানি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একটি সড়ক সড়ক রয়েছে। প্রথমবার যে কেউ দেখে হয়তো খাল মনে করবেন। বৃষ্টি আসলে সেই হাঁটু পর্যন্ত পানি গিয়ে কোমর পর্যন্ত উঠে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নির্বিকার। তাদের কোনো উদ্যোগই সফল হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এলাকাবাসীর ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে পাইওনিয়ার সড়ক ও হাজি জালাল আহমেদ সড়ক। এর মধ্যে হাজী জালাল আহমেদ সড়কের পানি মাঝে মধ্যে নিরসন করা সম্ভব হলেও পাইওনিয়ার সড়কে বছরজুড়ে পানি জমে থাকে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে ৮-১০ হাজার মানুষের নিয়মিত ভোগান্তির কারণ হিসেবে পরিণত হয়েছে কয়েক কিলোমিটারের এ দুটি সড়ক। ইতোমধ্যে রাস্তার দুই কিনার ধরে থাকা বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা মালিকরা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু এ ভোগান্তি লাঘবের জন্য এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।
পানি মাড়িয়ে চলতে গিয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায় দাবি করে অটোরিকশাচালক হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। পানি দিয়ে গেলে আমাদের অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যায়। একবার আসলে দ্বিতীয়বার অটোরিকশা ঠিক করা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় থাকে না। আমাদের গাড়ি চালানো যায় না। অথচ পানি কমানোর জন্য কেউই কোনো উদ্যোগ নেয় না।
হাজী জালাল আহমেদ সড়কের এক বাসিন্দা সজল বলেন, বৃষ্টি আসলেই রাস্তায় পানি জমাট বাঁধে। সেই পানি দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকে। আমাদের চলা ফেরায় অনেক কষ্ট হয়। মুসল্লিরা নামাজ পড়তে যেতে পারে না। আমি বিনীতভাবে জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন বিষয়টির দিকে নজর দেন।
এক ব্যবসায়ী বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে পানির কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। একবার ড্রেন পরিষ্কার করলে কিছুদিন ভালো যায়। পরে আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। এ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেয় না।
আলী নামের একজন বলেন, তিন থেকে চার মাস ধরে জলাবদ্ধতায় কষ্টের মধ্যে আছি। আমরা যারা রাস্তার দুই পাশে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারেন না। আমাদের দোকানগুলোতে বেচাকেনা হয় না। দোকানে বেচাকেনা না থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাজী মঈন উদ্দিন নগর সংবাদকে বলেন, সড়কটি এলজিইডির অধীনে রয়েছে। যার কারণে এ রাস্তা নিয়ে কাজ করা আমার ইখতিয়ারের বাইরে। মূলত সড়কটি নিচু হওয়ায় পানি জমে। বাসাবাড়ির ব্যবহারে পানি জমে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কথা দিয়েছিলেন রাস্তায় ড্রেন নির্মাণ করে দিবেন। তিনি হয়তো প্রকল্পও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের কাজ হচ্ছে ড্রেন পরিষ্কার করা।
জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন বলেন, এ এলাকায় জাতীয়ভাবে একটি প্রকল্প নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করতেছে। সেটা বাস্তবায়ন করতেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুধুমাত্র ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য। এটি একটি জাতীয় প্রকল্প। সেখানে আমাদের কিছু রাস্তা পড়ে গেছে। যে কারণে রাস্তাগুলো জলমগ্ন। সেই রাস্তাগুলো জলমগ্ন দূর করার জন্য আমরাও একটা প্রকল্প নিয়েছি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। ওই প্রকল্পটা কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আশরাফুল মমিন খান বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে এ ব্যাপারে কেউ আবেদন করলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। তারপরেও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দনশীল নগর সংবাদকে বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যরা বিষয়গুলো দেখবেন। তারা যদি আমাদের কাছে আসেন তাহলে বিষয়টি দেখবো।