শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে মার্কেটটিতে সত্যি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। ফায়ার সার্ভিসের ৩০ ইউনিটের প্রচেষ্টায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে পুড়ে গেছে কয়েকশ দোকান। আগুন লাগার কারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, শনিবার ভোররাতে চন্দ্রিমা মার্কেট থেকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে যাওয়ার জন্য পদচারী সেতুটি ভাঙা শুরু করে ডিএসসিসি। এতে শর্ট সার্কিট থেকে দোকানে আগুন লাগে। এ ঘটনার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য এবং ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের অপতৎপরতা থাকতে পারে।
তবে পদচারী সেতু ভাঙার সঙ্গে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের সূত্রপাতের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই পদচারী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই গতকাল দিনগত রাতে সেটি ভাঙতে যায় ডিএসসিসির কর্মীরা। এর মধ্যে মার্কেটে আগুন লাগে। এখন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, সেতুটি ভাঙার কারণে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, পদচারী সেতুর সঙ্গে মার্কেটের বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বঙ্গবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) হাজারীবাগ ও ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে আগুন লাগে। কয়েক দিন পরপর এ আগুনের নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে বুয়েটের এক প্রতিবেদনে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল ডিএসসিসি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধায় আর বাস্তবায়ন হয়নি। পরে নিজেরাই ছাদের খসে পড়া অংশ ও পিলারগুলো পলেস্তারা করেন দোকানিরা। এরপর ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর আলাদা আরেকটি প্রতিবেদনে মার্কেটটি তিন সপ্তাহের মধ্যে খালি করতে সুপারিশ করে বুয়েট। কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তখনও বাধা দেন। এই মার্কেটে প্রায় এক হাজার ২৪৫টি দোকান রয়েছে।
ঢাকা নিউমার্কেটের পশ্চিম-উত্তর দেওয়াল ঘেঁষে রয়েছে এ মার্কেট। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা নিউমার্কেটের উত্তর-পশ্চিম পাশে লম্বালম্বি রয়েছে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ। তিনতলা পুরো মার্কেটটিতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) লাগানো। মার্কেটে নানা রকমের কাপড়, সিরামিক, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকান রয়েছে। মার্কেটের ভেতরে তেমন কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। এই মার্কেটে চলাচলের সবকটি পথ অবৈধ দোকানপাটের দখলে ছিল
তিনি বলেন, ডিএসসিসির অধীনে অনেক মার্কেট রয়েছে। সংস্থাটি একটি মার্কেট নির্মাণ শুরু করলে গড়ে একযুগ সময় কাটিয়ে দেয়। কোনো কাজ সময়মতো শুরু বা শেষ করতে পারেনি। এমন বাস্তবতায় তখন নিউ সুপার মার্কেট ভাঙা বন্ধে বাধা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে আজকের আগুন সন্দেহজনক। ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে কেউ এ আগুন লাগিয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নিউ সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় শার্ট-প্যান্টের দোকান ছিল মতিউর তালুকদারের। আগুনে তার দোকানটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। শনিবার দুপুরে মতিউর বলেন, নিউ সুপার মার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে যাতায়াতের জন্য একটি পদচারী সেতু রয়েছে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) দিনগত রাতে সেতুটি ভাঙতে যায় ডিএসসিসির কর্মীরা। এক পর্যায়ে ভোরে এই সেতু সংলগ্ন দোকান থেকেই আগুন লাগে। মুহূর্তে আগুন সব দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এখন এই পদচারী সেতু ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া এবং পিলার ফেটে যাওয়ায় ২০০৭ সালে মার্কেটটি পরীক্ষার জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বুয়েট সবকিছু পরীক্ষা করে তা দ্রুত সংস্কার করার কথা বলেছিল। কিন্তু ওই সময় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ, বনলতা কাঁচাবাজার ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট পরীক্ষা করা হয়। তিনটির মধ্যে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটই ধসে পড়া এবং আগুনের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। তখন দুই দফায় ‘মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ড লাগান ডিএসসিসির কর্মীরা। কিন্তু লাগানোর পরই তা খুলে ফেলেন দোকান মালিক সমিতির নেতারা। অথচ মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা খালি করতে প্রতিবেদনে নির্দেশনা রয়েছে।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না তা গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে বারবার অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। তাই আমরা শঙ্কিত নাশকতা কি না। গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে গুরুত্ব সহকারে এটি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই।
পাশাপাশি গুজব ও অপপ্রচার রোধে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন মেয়র।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালেই ফায়ার সার্ভিস ভবনটি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তখন সেটি নিরাপদ করতে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া নির্দেশনার কিছু বাস্তবায়ন হলেও এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ করা হয়েছে বলে মনে হয় না।