বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা দরকার’। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। নির্বাচন কমিশনাররা হচ্ছেন বিকলাঙ্গ, তাদের কাজ করার শক্তি নেই। মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের শ্রদ্ধা করি। নির্বাচন কমিশনাররা হচ্ছেন বিকলাঙ্গ, তাদের কাজ করার শক্তি নেই। তিনি বলেন, গাইবান্ধায় কারচুপির জন্য নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তদন্তে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অভিযুক্তদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।
সরকারি তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নেই নির্বাচন কমিশনের। সরকার দলীয় প্রার্থীদের জন্য যারা কারচুপি করেছে, তাদের তো শাস্তি দেবে না সরকার। সম্মেলনে মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির কমিটিতে এএনএম রফিকুল আলমকে সভাপতি ও এসএম হাসেমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ১৯৯১ সালে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তখন কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়নি। বিএনপি ১৯৯৬ সালে আবার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চেষ্টা করেছিল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে যায়নি। আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি আন্দোলন করেছিল। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আগে ইচ্ছেমতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তৈরি করে বিএনপি নির্বাচন করতে চেয়েছিল। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনও সংবিধান মেনে হয়নি।
এখন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে। আসলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শুধু ক্ষমতার জন্য লড়াই করে। ক্ষমতায় গেলেই সংবিধানের কথা বলে আর ক্ষমতার বাইরে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলেন। গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা সরকারের আওতার বাইরে নির্বাচন চাই। আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। প্রয়োজনে সব দল মিলেই সিদ্ধান্ত নেবো। নির্বাচনে আমরা জনগণের রায় দেখতে চাই। এতে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, বিসিসির রিপোর্টে বলেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তিন বছরে আয় করতে পারেনি, খরচ উঠবে কবে? এই অবস্থায় নাকি আরও একটি স্যাটেলাইট আসবে। যার অর্ধেক খরচ দেবে সরকার আর অর্ধেক ঋণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তিন বছরে তিনশ কোটি টাকা আয় করেছে, কিন্তু কত টাকা ব্যয় করেছে তা কিন্তু বলেনি। আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই। এটি যদি ১৮ বছর চলে তাহলে আয় হবে ১৮শ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় হলো ৪ হাজার কোটি টাকা।
জিএম কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ক্ষমতায় বসাবে দেশের মানুষ, বিদেশিরা নয়। বিদেশিরা কি কাউকে ক্ষমতায় বসাতে বলেছে? তারা বলেছে দেশে যেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। দেশের মানুষ যাকে চাইবে সেই ক্ষমতায় যাবে। এমন কথায় ওবায়দুল কাদের সাহেব মাইন্ড করেন কেন? কেন আপনাদের খারাপ লাগে? তার মানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ক্ষমতার পালাবদল হবে এটা মনে করছেন তিনি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আপনারা চান না। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশের মানুষের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। লুটপাট এখন ওপেন সিক্রেট। এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ১৪ বছরে দেশের ব্যাংক থেকে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ থাকে না। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও টাকা দিতে হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মালিক হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করে কারচুপি করতে চায়। ক্ষমতার বাইরে গেলে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে। এই দুটি দলের ওপর দেশের মানুষ বিরক্ত।