চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাড়া বাড়িতে সম্পা খাতুনকে (২৫) খুনের ঘটনার তার স্বামী আব্দুল্লাহ-আল-মামুনকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৫)। গ্রেপ্তারের পর তিনি ঘটনাটি স্বীকার করেন।
মামুন বলেছেন, বার বার অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোয় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন তিনি। বহুবার সম্পাকে শোধরানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কথা শুনতেন না। শাসন করায়, উল্টো তাকেই নির্যাতন করা হচ্ছিল। যে কারণে শ্বাসরোধকে স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।
র্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মনিম ফেরদৌস বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে এসব তথ্য জানান। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, ১৪ বছর আগে সম্পার সঙ্গে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছিল তার। তাদের তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে। মামুন কুমিল্লায় থাকতেন। মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি আসতেন।
একদিন গ্রামে ফিরে মামুন জানতে পারেন তারই মেজ ভাই হারুন অর রশিদ কমলের সঙ্গে সম্পা পরকীয়ায় লিপ্ত। শুধু তাই নয়, কমল তার স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা করান। এরপর মামুন তার স্ত্রীকে কঠোরভাবে সতর্ক করেন।
কিছুদিন পর বাড়ি এসে স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে তার বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ভিডিও পান তিনি। পরে সম্পাকে সঙ্গে করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিয়ে আসেন। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন। কয়েকদিন পর মামুন জানতে পারেন তারই সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আত্মসম্মান রক্ষায় তিনি সম্পাকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নিয়ে আসেন।
এলাকায় ফিরে কমলের সঙ্গে আগের মতো সম্পর্ক তৈরি করেন সম্পা। ফলে মামুন বাধ্য হয়ে বাসা পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঠানপাড়ায় শ্বশুরবাড়ির কাছে একটি ভাড়া বাসা নেন। কিছুদিন পর কুমিল্লা ফেরেন তিনি। কয়েকদিন পর স্ত্রী সম্পর্কে বাজে তথ্য পান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পাঠানপাড়ার ভাড়া বাসায় সম্পা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করছেন।
এই ঘটনা জানার পর গত ১৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসেন মামুন। পরদিন তার স্ত্রীর মোবাইলে বেশ কিছু আপত্তিকর ভিডিও পান। তিনি কৌশলে সম্পার মোবাইলের মেমোরি কার্ড নিয়ে নেন। সম্পা এটি টের পেয়ে মেমোরি কার্ড উদ্ধারের জন্য কমলকে কল করেন। পরে তার নির্দেশনা মোতাবেক পরিবারের লোকজনদের সহায়তায় মামুনকে নির্যাতন শুরু করেন সম্পা। সারা রাত একটি ঘরে আটকে রাখা হয় তাকে।
পরে ১৯ ডিসেম্বর সকালে সম্পা মামুনের কাছে যান। স্বামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। সুযোগ পেয়ে মামুন তার স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ সম্পার মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় সম্পার বড় ভাইয়ের স্ত্রী হালিমা শিল্পী বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। পরে কাশিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মনিম ফেরদৌস।