২১ আগস্ট ২০০৪। বিকেলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পদভারে মুখরিত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। দলের ডাকে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও মিছিল করতে এসেছেন তারা। সফল সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যও দিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভ মিছিলের। শেখ হাসিনাসহ নেতাদের মঞ্চ থেকে নামার আগেই চারদিক থেকে আসতে শুরু করে বিকট আওয়াজ। মুহূর্তেই শত শত নেতাকর্মী রক্ত-মাংসের দলা হয়ে পড়ে যায়। দিকবিদিক ছোটাছুটি। কিছু বুঝে উঠার আগেই রক্তগঙ্গা বয়ে যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে।
সন্ত্রাসের নজিরবিহীন সেই নৃশংসতায় তাৎক্ষণিক ১২ ও পরে চিকিৎসাধীন আরও ১২ জন নিহত হয়। সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০০ আহত হয়। এমনকি আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। তাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। যদি যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করেও ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। সেগুলো বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভেদ করতে পারেনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন। নারকীয় সেই সন্ত্রাসী হামলার ১৯তম বার্ষিকী আজ। সেই হামলায় শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন আহতরা। এখনও অনেকে সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
ওই ঘটনায় দুটো মামলা হয়। হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে (সংশোধনী-২০০২) আরেকটি মামলা করা হয়। গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি বিশেষ দ্রুত আদালত।
রায়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য মামলায় ফাঁসির কারণে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর) মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী (ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ ইতিহাসের এই জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে হামলায় নিহতদের স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি পালনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সোমবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। পরে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃ-প্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।