নগর সংবাদ।।বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে, এ ধরনের রটনাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু ঋণ নয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগও খুব হিসেবে করে দেখে-শুনে নেয়। আগে দেশ ও জনগণের কল্যাণ হবে কিনা, তা নিশ্চিত হয়ে নেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকম কথা যারা লিখছে। আমি আবারও বলছি, ওই পত্রিকার লেখা পড়ে আমি রাষ্ট্র চালাই না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এখন তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে, এ রকম একটা কথা রটাচ্ছে। ’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা নিচ্ছি, এটা ঠিক। কিন্তু সব সময় আমাদের একটা হিসেব থাকে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ আমরা কিন্তু ডিফল্টার না। আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি, প্রত্যেকটা ঋণ আমরা সময় মতো পরিশোধ করেছি। আমরা যত রকম দুর্দশা হোক, এমনকি করোনার মাঝেও আমরা ঋণখেলাপি হইনি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমরা যে উন্নয়নের প্রোগ্রাম নেই, সেটা নেওয়ার সময় আমরা হিসেব রাখি। কোথা থেকে কত ঋণ আমরা নিলাম আর সেই ডেভেলপমেন্ট যেটা করছি সেখান থেকে কতটুকু আমরা লাভবান হবো, এই উন্নয়ন থেকে রিটার্নটা কী, কতটুকু মানুষের কল্যাণে যুক্ত হবে, এই রিটার্নটার ব্যাপারে আমরা কিন্তু সচেতন। ’
‘প্র্রত্যেকটা পরিকল্পনা নেওয়ার সময় এটাই হিসেব করি, এই কাজটা করলে পরে কতটুকু আমার দেশের মানুষ পাবে, কতটুকু আমার অর্থনীতিতে যোগ হবে, অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী হবে। মানুষের কল্যাণে কতটুকু দিতে পারবো, করতে পারবো। আমরা সেই চিন্তাটাই করি। ’
বিদেশি বিনিয়োগ নেওয়ার ব্যাপারেও বাংলাদেশ সর্তক জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেই বিনিয়োগটাই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে আমার দেশ লাভজনক হবে। একটা বিনিয়োগ আসলো আর একটা বিশাল বিশাল কিছু তৈরি করে দিয়ে গেলো, সেটা আমার কোন কাজে লাগলো না। সেখানে আমরা একটু ধীরে চলি। ’
বিদেশি বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তকতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হবে, সেই চিন্তাটা মাথায় রাখতে হবে। নইলে বিনিয়োগের জন্য যেভাবে সবাই ঝাঁপ দিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের খুব হিসেব করে পা ফেলতে হবে। এটা আমি সবাইকে খুব বিনয়ের সাথে অনুরোধ করবো। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে মনে করবে হ্যাঁ, বিনিয়োগ আসছে আমরা নিচ্ছি না কেন? নিচ্ছি না নেবো, কিন্তু তার বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, বাংলাদেশের জনগণ কী পাবে, আমরা কতটুকু দেশের কল্যাণে লাগাতে পারবো, সেটা চিন্তা করে আমাদের করতে হবে। যেটা আমার দেশের কল্যাণে লাগবে না, সেটা আমরা করবো না। ’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের এই হিসেবটা আছে বলেই ওই শ্রীলঙ্কা করা, এটা অতটা সহজ হবে না। তবে যারা করার চেষ্টা করবে, যেটা শ্রীলঙ্কাকেও যেমন করে দিয়েছে, আমাদের ওপরও চাপ আসবে, ওরকম কথা আসবে। আমরা যদি সর্তক থাকি তাহলে কেউ আমাদের কোএনা ক্ষতি করতে পারবে না, এটা আমার বিশ্বাস। ’
অপপ্রচারে না ঘাবড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রকম তো বার বারই আমরা ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আসছি, তো এ জন্য একটু বেশি জিনিসটা বুঝি এবং জানি। আগাম বুঝতে পারি এখন কোনো পক্ষ থেকে ঝড়টা আসতে পারে। তো আগে থেকে আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে চাই। আমি এটাই বলবো, কে কী বললো, কে কী চিন্তা, ওটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ’
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে এ মতবিনিময় সভা। এতে অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিগত তিন বছরের কাজের ওপর একটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।