দিনাজপুরের বাবার দেয়া বিষে রিমন (৭) ও ইমরান (৩) নামে নিহত দুই শিশুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তবে মা কুলসুম বানুকে তাদের মরদেহ দেখতে দেয়নি এলাকাবাসী।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ২টায় জানাজা শেষে উপজেলার কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দুই ভাইয়ের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাতে মা কুলসুম বানু বাদী হয়ে বিরল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তার আগে সন্ধ্যায় বাবা শরিফুল ইসলামকে উপজেলার মঙ্গলপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ মর্গে দুই শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. জামিল আহমেদ। সকাল সাড়ে ১১টায় নিহত দুই শিশুর মরদেহ দাদার বাড়ি বিরল উপজেলার শংকরপুর ঘোড়ানীর গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা দেয়।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিহত দুই শিশুর মা কুলসুম বানু মরদেহ দেখতে আসলে স্থানীয়রা তাকে তাড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কুলসুম বানু প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামের বাসায় আশ্রয় নেন। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসী তাকে সন্তানদের মরদেহ দেখতে দেয়নি।
এই ঘটনায় এলাকাবাসী নিহত দুই শিশুর বাবা-মায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জানান, বাবা ও মায়ের দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছে তাদের দুই সন্তান। বাবা-মা দুজনেই সন্তানদের খুনি। তাদের মরদেহ দেখার কোনো অধিকার নেই। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিহত দুই শিশুর চাচা রাশেদুল ইসলাম আশিক জানান, নিহত রিমন ও ইমরান আমার ছোট ভাই শরিফুল ইসলামের ছেলে। ছোট বেলা থেকে তাদের আমি নিজের সন্তানের মতো দেখভাল করেছি। কয়েকমাস ধরে ছোট ভাই শরিফুলের সঙ্গে তার স্ত্রীর পারিবারিক ঝামেলা চলার এক পর্যায়ে তার স্ত্রী তাকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। এরপর সে বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকাও গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে আমার ভাইকে নানানভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে বাচ্চাদের নিয়ে সে বাসায় ফিরে আসে। এই ঘটনার পর থেকে শরিফুল খুব ভেঙ্গে পড়ে। শেষ পর্যন্ত নিজের সন্তানদের বিষ খাইয়ে হত্যা করল। এর জন্য তার স্ত্রীও দায়ী। শরিফুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আদালত এখন যা সাজা দিবে তা দিক। আমাদের কোনো দাবি-দাওয়া নাই।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ মোহাম্মদ জিল্লাহ আল মামুন বলেন, দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত একমাত্র আসামি শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতেই কুলসুম বানু বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃত শরিফুলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে শরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে তাদের দুই সন্তান কার কাছে থাকবে- এটা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত থেকে নিখোঁজ ছিলো রিমন (৭) ও ইমরান (৩)। শুক্রবার সকালে উপজেলার ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ঘর থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।