নগর সংবাদ।।বাবার মৃত্যুর সঙ্গে জীবনের সব হাসি-আনন্দ শেষ ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ছেলেটি।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়নি।
প্রথমদিন স্কুলে মূলত শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও কুশল বিনিময়ে কাটে। দীর্ঘদিন বিরতি শেষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরাসরি দেখা হওয়ায় সবারই আনন্দে সময় কাটে।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে স্কুলে বিভিন্ন ক্লাসে শিক্ষকরা কুশল বিনিময় শেষে করোনাকালে কার কেমন কেটেছে বলতেই ক্লাসে নীরবতা নেমে আসে। ক্লাসের যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশি দুষ্টমি করে গোটা ক্লাস মাতিয়ে রাখতো সেই ছেলেটিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ছেলেটি জানায়, করোনায় গত বছরের শুরুর দিকে তার বাবা মারা গেছেন। বাবার মৃত্যুতে তাকে আর তার বোনকে নিয়ে তার মা দিশেহারা। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের সব হাসি-আনন্দ শেষ হয়ে গেছে বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ছেলেটি। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও চোখের কোণে জল চলে আসে। শিক্ষক এগিয়ে এসে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে এভাবে ভেঙে না পড়ে ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরামর্শ দেন।
শিক্ষক জানান, তার বাবাও কিছুদিন আগে ব্রেন স্ট্রোক করে মারা গেছেন। একাধিক শিক্ষার্থী কেউ বাবা কেউ মা, কেউ দাদা-দাদি ও আত্মীয়দের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা শেষে বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন।
সোমবার দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন (ছদ্মনাম) গত দুদিনের স্কুলের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিলা নুর (ছদ্মনাম) জানান, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলার খবরে ভীষণ আনন্দিত তবে স্কুলে গিয়ে অনেক সহপাঠীকে দেখতে না পেয়ে আনন্দ অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মুখে শুনেছেন করোনাকালে কেউ কেউ বাবা ও মাকে হারিয়েছেন।
তাছাড়া অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়ে ও ব্যবসায় লোকসানের কারণে বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। স্কুল খোলার সংবাদে তারা ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন। স্কুলে গত দুদিনে শিক্ষিকরা ঘরে-বাইরে প্রয়োজনীয় করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলে ওই শিক্ষার্থী জানান।