নগর সংবাদ।। ‘আমার সোনা আমায় ফেলে চলে গেল, আমি এখন কারে নিয়ে থাকব। কত কষ্টে আমার সোনারে নিজে খেয়ে-না খেয়ে বড় করছি। ওর বাবা ১০ বছর বয়সে রেখে বাড়ি থেকে চলে গেছে। সেই থেকে আমার সোনারে আমিই দেখে শুনে রেখেছি।’
এভাবে বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন আর মূর্ছা যাচ্ছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নয়ন হোসেন (১৮) বাপ্পির মা জায়েদা বেগম।
নিহত বাপ্পি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। ছয় বছর আগে দেনার দায়ে বাবা নজরুল ইসলাম বাড়ি ছাড়েন। আর ফিরে আসেনি। তার কোনো ভাই-বোন নেই।
বুধবার খালাতো বোন মিতার বিয়ের জন্য ঝিকরগাছার গদখালীতে ফুল আনতে গিয়ে মোটরসাইকেল-ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত হন নয়ন হোসেন। মোটরসাইকেলে থাকা নয়নের বন্ধু তৌহিদুল ইসলাম (১৮) ও মিতার ফুফাতো ভাই যশোরের শংকরপুরের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে জীবন হোসেনও (১৭) নিহত হন।
নিহতদের পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। তাদের অকাল মৃত্যুতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
নয়ন হোসেনের বন্ধু তৌহিদুল ইসলামও বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তৌহিদুলের বাবা নজরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ছেলেটা মোটরসাইকেল কেনার বায়না ধরে। মোটরসাইকেল কিনে দেয়ায়ই বুকের ধনকে নিয়ে গেল। এখনো মোটরসাইকেল কেনার কিস্তির টাকাও শেষ হয়নি।’
তৌহিদুল ইসলামও একই মাদরাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
এদিকে বিয়ের মাত্র দুদিন আগে খালাতো ও ফুফাতো ভাইকে হারিয়ে উচ্চস্বরে বিলাপ করছিলেন মিতা। মিতা মগরব সরদারের মেয়ে। তাকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না।
বৃহস্পতিবার মিতার গায়ে হলুদ এবং শুক্রবার বিয়ের দিন। বিয়ে বাড়িতে আনন্দের বদলে চলছে শোকের মাতম। আকস্মিক এ মৃত্যুর ঘটনায় বিয়ে বাড়িতে ছিল সুনসান নীরবতা। মাঝে মাঝে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।
মিতার চাচা রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ভাগনে জীবন হোসেন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এদিন সকাল ১০টার দিকে মিতার খালাতো ভাই নয়ন হোসেন ও জীবন হোসেন মিলে তৌহিদুল ইসলামকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাইরে বেড়াতে যায়। তারা যে বিয়ের জন্য ফুল কিনতে গিয়েছিল এমন কথাও কেউ বলতে পারছে না। দুপুরের দিকে তারা খবর পান ঝিকরগাছার বেনেয়ালী বাজারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে ভাগনে জীবন হোসেন। পরে হাসপাতালে মারা যায় নয়ন হোসেন ও তৌহিদুল ইসলাম।’
এদিকে মাগরিবের নামাজ শেষে স্থানীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তৌহিদুল ইসলামের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। অন্যদিকে নয়ন হোসেনের দাফন সম্পন্নের প্রস্তুতি চলছিল।