স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখতে অনেকে সুডোকু, ওয়ার্ডল বা ব্রেইন-ট্রেনিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ব্যায়ামই হতে পারে স্মৃতি, মনোযোগ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার দুজন গবেষক ২,৭০০টি গবেষণা ও ২.৫ লক্ষ অংশগ্রহণকারীর ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে হাঁটা, সাইক্লিং, যোগ ব্যায়াম, নাচ বা পোকেমন গো-এর মতো অ্যাক্টিভ ভিডিও গেমস্ এর মতো শারীরিক ক্রিয়াই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। বয়স যাই হোক না কেন, নিয়মিত চলাফেরা চিন্তা-ভাবনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্মৃতি ধারণ ও মনোযোগের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞান যা বলে
গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কের তিনটি মূল ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রথমত, জ্ঞানীয় দক্ষতা বা কগনিশন, এটি স্পষ্টভাবে চিন্তা করা, শেখা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য। দ্বিতীয়ত স্মৃতিশক্তি, যা মূলত স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মনে রাখার ক্ষমতা। এবং তৃতীয়ত, নির্বাহী কার্যাবলি বা এক্সিকিউটিভ ফাংশন, যা মনোযোগ, পরিকল্পনা, সমস্যা সমাধান ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।
গবেষণার ফলাফল
১. উন্নতি ছোট থেকে মাঝারি মাত্রার হলেও তা অর্থপূর্ণ।
২. সব বয়সেই উপকার দেখা গেছে, বিশেষত শিশু-কিশোরদের স্মৃতিশক্তিতে বড় ধরনের উন্নতি চোখে পড়ে।
৩. এডিএইচডি বা মনোযোগ সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নির্বাহী কার্যাবলিতে বেশি উপকার দেখা যায়।
৪. মাত্র ১২ সপ্তাহ নিয়মিত ব্যায়াম করেই অনেকে উপকার পেয়েছেন।
৫. সর্বোচ্চ উপকার পেতে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট বা দিনে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা জরুরি।
মস্তিষ্কে যা ঘটে
হাঁটা বা সাইক্লিং হিপোক্যাম্পাসের আকার বাড়ায়, মস্তিষ্কের এই অংশ স্মৃতি ও শেখার জন্য দায়ী।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্করা এক বছর অ্যারোবিক্স করায় হিপোক্যাম্পাস ২% বড় হয়, যা এক-দুই বছরের বয়সজনিত সংকোচন পূরণ করে।
দৌড়ানোর মতো ইনটেন্স ওয়ার্কআউট নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ায়, ফলে মস্তিষ্ক দ্রুত শেখে ও বয়সের সঙ্গে সতেজ থাকে।
২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতি ছয় জনে একজন হবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী। এর সঙ্গে বাড়বে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি। অথচ প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের একজনও পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন না।
তবে সুখের কথা হলো নির্ধারিত সময়ের শরীরচর্চার সঙ্গে দৈনন্দিন চলাফেরাও এই ব্যায়ামের অংশ হতে পারে। এর জন্য ম্যারাথন দৌড়াতে হবে না। প্রতিদিন হাঁটা ও যোগ ব্যায়াম করাও সমান কার্যকর। তাই এই বিষয়টিকে আপনার জীবনের অংশ করে নিতে হবে।
নাতি-নাতনির সঙ্গে এমন ভিডিও গেমস্ খেলতে পারেন যার ফলে শারীরিক নড়াচড়া হয়। এডিএইচডি লক্ষণযুক্ত কিশোর-কিশোরীরা ড্যান্স ক্লাস শুরু করতে পারেন। ব্যস্ত অভিভাবকরা মিটিংয়ের কাজের ফাঁকে ছোট ছোট ওয়ার্কআউট সেশন করতে পারেন। এমনকি স্কুলেও এই ধারণা কাজে লাগছে।
ব্যায়াম হলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষার সবচেয়ে শক্তিশালী, সহজলভ্য ও বিনামূল্যের হাতিয়ার। একনও দেরি হয়ে যায়নি। আজই শুরু করুন স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর এই প্রক্রিয়া। সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।