ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের গ্রামে সিরাজগঞ্জের যমুনা বিধৌত চৌহালী উপজেলার দুর্গম শৈলজানা গ্রামে কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভাষা আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক আব্দুল মতিনের জন্মভূমি শৈলজানা নিম্নমাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে দিবসটি পালন করা হয়।
এজন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার ও স্কুলের ব্রেঞ্চ দিয়ে বেদি তৈরি করে। চারিপাশ রঙিন কাগজ দিয়ে পতাকা টানায় তারা। এতে একে একে শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ গ্রামবাসী।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে দেশজুড়ে যখন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে; ঠিক তখনই যমুনা বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের শৈলজানা চরে ভাষা মতিনের গ্রামে নেই কোনো আয়োজন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের স্মরণে চাঁন্দইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে শহীদ মিনার ও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছিল। যমুনার অব্যাহত ভাঙনে ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টিসহ শহীদ মিনার বিলীন হয়ে যায়। এর পাঁচ বছর পর শৈলজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলেও সেটিও যমুনায় বিলীন হয়। এজন্য কয়েক বছর ধরে আবারও বাঁশ ও কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক আব্দুল মতিনের গ্রামে কীভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন বা রাজতৈনিক নেতারা খোঁজখবর রাখেন না। তবে স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা কলাগাছের শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করে আসছে।
শৈলজানা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, অবহেলিত জনপদ চৌহালীর চরাঞ্চলে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই। বিশেষ করে ভাষা মতিনের এলাকায় একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার করার দারি দীর্ঘদিনের।
ভাষা মতিনের কর্ম ও চিন্তা নিয়ে গবেষক হান্নান মোর্শেদ রতন বলেন, মাতৃভাষার জন্য জীবন বাজি রাখা সৈনিকদের অন্যতম আব্দুল মতিন। যার নামই বলা হয় ভাষা মতিন। তার গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। এটা অত্যন্ত লজ্জার।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার উন্নয়ন না করলেও আশা করি বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ নজর দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, পাঠাগারসহ নানা উন্নয়নে ভাষা শহীদ মতিনের নামকরণ করা হবে।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া জানান, ভাষা মতিনের এলাকায় শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার স্মরণে উপজেলা সম্মেলন কক্ষকে নামকরণের চিন্তা করেছি। নিয়ম মেনে আশা করছি দ্রুত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।