ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎকারী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের এই মূলহোতা নজরুল ইসলাম (২৯) ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- ওয়ায়েশ করোনি ওরফে সেলিম (৪৭), নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মো. এনায়েত (৪৮)।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চাকরির জন্য আবেদন করে প্রতারক চক্রের মাধ্যমে ১১ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার হন নজরুল ইসলাম। এরপরও একাধিকবার চাকরির চেষ্টা করে প্রতারণার শিকার হন তিনি। অর্থ খুইয়ে চাকরি না পেলেও নিজে নিজেই বনে যান ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা।
ভুয়া পরিচয়ে নিজেই গড়ে তোলেন একটি প্রতারক চক্র। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন বা কাস্টমসে আটকে থাকা বিভিন্ন মালামাল ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে জনসাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা। এভাবে চক্রটি গত দুবছরে ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় চার-পাঁচ কোটি টাকা। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, দুটি মোটরসাইকেলসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়
তিনি বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের হোতা নজরুলসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মোট সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন।
চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকরি প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মূলহোতা নজরুলের কাছে নিয়ে আসতেন। নজরুল কাস্টমসের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় চাকরি প্রত্যাশীদের বলতেন যে, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এভাবেই চাকরি প্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জন করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
এছাড়া, তারা গাড়িতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এমনকি বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
এই কর্মকর্তা বলেন, নজরুল স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে কাস্টমসে চাকরির জন্য আবেদন করে বিভিন্ন প্রতারককে বিভিন্ন সময়ে অর্থ প্রদান করে প্রতারিত হন। প্রথমে ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও চাকরি পাননি।
২০১৩ সালে নৈশ প্রহরী এবং ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার আশায় পুনরায় আবেদন করে প্রতারিত হন। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং কাস্টমসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে আসার সুবাদে কাস্টমসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন নজরুল।
এরপর নিজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের লোভে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। প্রতারণা করার জন্য সে নিজেকে এলাকায় ঊর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে কাস্টমসের পিওন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চার-পাঁচ জনকে চাকরি প্রদান করে বিশ্বস্ততা অর্জন করে আরো অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেন।
দেখা যায় নজরুল চাকরির জন্য ২০-২৫ জনের কাছ থেকে টাকা নিতেন। হয়তো দুই-এক জনের এমনিতেই চাকরি হয়ে যেত। তখন তার মাধ্যমে চাকরি হয়েছে বলে প্রচার করতেন। যাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তাদেরকে ভুয়া চেক ও স্ট্যাম্প দিতেন, চাকরি না হলেও পরে টাকা ফেরত পেতেন না ভুক্তভোগীরা।
তিনি আরো বলেন, নজরুল বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে তার নামে অর্থ সম্পদ গড়ে তোলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১৭ জন ভুক্তভোগীর তথ্য পেয়েছি, যাদের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন নজরুল। তদন্তে বাকিটা বের হয়ে আসবে।