রিপন মাহমুদ|| নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশেন ১৭ নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়ায় অসহায়দের জমি দখল করে ও চলাচলের যথাযথ রাস্তা না দিয়ে পাইকপাড়া বড় জামে মসজিদ পুন:নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জমির মালিক পারভীন আক্তার নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মসজিদ কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন মৃধা ও সেক্রেটারী আবুল সরকার, সদস্য মোহাম্মদ মিঠু ও আব্দুল মালেক ভুইয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ মসজিদের পুন: নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। জারি করেছে ১৪৪ ধারা। মঙ্গলবার (০৮ জুন) দুপুরে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) সোহেল সিদ্দিকী সরেজমিন পরিদর্শনে এসে এ কাজ বন্ধের এ নির্দেশ দেন। মামলার বাদী পারভীন আক্তার বলেন, এখানে মসজিদ ছিলো, মসজিদ হবে এটা আমরা সকলেই চাই। তবে আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে মসজিদ নির্মাণ কতটুকু যুক্তিসংগত তা মসজিদ কমিটিই ভালো বলতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, পাইকপাড়া বড় জামে মসজিদের নামে জমি ওয়াকফা করার সময় উল্লেখ ছিলো মসজিদের পিছনে বসবাসকারী ভুক্তভোগী পারভীনসহ ১৫-১৬টি পরিবারের চলাচলের জন্য সাড়ে ১০ ফুট জায়গা থাকবে। সম্প্রতি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং আশেপাশের মানুষের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা না রেখেই এর পুন:নির্মাণ শুরু করে মসজিদ কমিটি।
এসময় আমরা ভুক্তভোগীরাসহ অন্য বাসিন্দারা রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ কমিটি টালবাহানা শুরু করে। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের মধ্যস্থতায় চলাচলের জন্য একটু বাকাঁ করে সাড়ে দশফুট রাস্তা ছেড়ে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। যা মসজিদ কমিটি ও আমরা ভুক্তভোগীরা উভয় পক্ষই মেনে নেয়। তবে, সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার পরও মসজিদ কমিটি রাস্তার জায়গা না রেখে আবারও পুন:নির্মাণ কাজ শুরু করে। ফলে বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজেদের চলাচলের রাস্তার সঠিক বিচারটুকু না পেয়ে অবশেষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে আইনের আশ্রয় নেন ভুক্তভোগী পারভীন।
পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোসাম্মৎ রহিমা খাতুন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ দখল বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করে। আদালতের আদেশ পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সদর মডেল থানা পুলিশ ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে মসজিদের পুন: নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এদিকে মসজিদ কমিটির সদস্য ও মহানগর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ কামাল দেওয়ান দাবি করেন, যে রাস্তার কথা বলা হচ্ছে তা ছিলো মসজিদের মিনারের নীচে। তাই আমরা বলেছিলাম একটু সাইড দিয়ে রাস্তা করে দিবো, সেখান দিয়ে চলাচল করতে। কিন্তু তারা মানে নি।
এমনকি প্যানেল মেয়র বিভা হাসান, মেয়র আইভীও তাদের অনেক বুঝিয়েছেন কিন্তু তারা মানে নি। পরে আজকে জানতে পারলাম তারা মামলা করেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. সোহেল সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে উভয় পক্ষকে কোর্টের যে আদেশ ১৪৪ তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উভয়পক্ষকে তাদের কাগজপত্র হাজির করতে বলা হয়েছে। একইসাথে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একইবিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা এর আগে বসে একটু বাকা করে রাস্তা চলাচলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম তখন উভয় পক্ষই মেনে নিয়েছিলো। পরবর্তীতে আবার মেয়র মহোদয়ের সাথেও একইবিষয়ে কথা হয়েছিলো। তখন তিনিও বলেছিলেন যেহেতু একটা মসজিদ নির্মাণ হবে। এটা এলাকার সৌন্দর্য্যের বিষয় তাই একটু বাকা রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু পিছনে যাদের বাড়ি তারা সেটা মানে নি। তিনি আরও বলেন, আজকে আমি শুধু এটুকু জানতে পেরেছি তারা নাকি মামলা করেছে। আমি বিস্তারিত কিছুই জানি না। কালকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত জেনে আপনাদেরকে বলতে পারবো।