মাদারীপুরে মসজিদের ভেতরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আহত আরও এক ভাই মারা গেছেন। তার নাম তাজেল হাওলাদার (২০)।
নিহত তাজেল সদর উপজেলার খোয়াজপুর এলাকার আজিজুল হাওলাদারের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন। তাজেলের মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছেন নিহতের মেঝ ভাই রাজু হাওলাদার।
এর আগে গত ৮ মার্চ পূর্ব বিরোধ ও বালু ব্যবসার জেরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
নিহতরা হলেন- আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫), সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০), তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার (১৭)। আতাউল ও সাইফুল সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়ি এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে ও পলাশ একই এলাকার মুজাম সরদারের ছেলে। নিহত সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাজেল, তিনি সাইফুলের চাচাতো ভাই। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অলিল সরদার (৪০) এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, ৮ মার্চ প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত তাজেলকে গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল থেকে মাদারীপুরে নিয়ে আসা হয়। পরে রোববার মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে তাজেলকে চিকিৎসার জন্য পুনরায় ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে তার অবস্থা খারাপ হলে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সকালেই তাজেলের পরিবার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাজেল মারা যান।
নিহত তাজেলের মেঝ ভাই রাজু হাওলাদার বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে ভাই মারা গেছে। অনেক চেষ্টা করছি, কোনোভাবেই ভাইরে বাঁচাইতে পারি নাই। প্রথমে ভালোই সুস্থ হয়ে উঠছিল। ঢাকা থেকে ছেড়ে দিছে। মাদারীপুর নিয়ে গেছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাই অসুস্থ, মাদারীপুরের ডাক্তার কইছে, ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকায় নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরেই ভাইডা মইরা গেল। যারা আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই।
স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এ নিয়ে প্রতিবেশী জেলা কৃষক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জেলা যুব দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শাহ্জাহান খান ও বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তিনি। এ কারণেই গত ৮ মার্চ শাহ্জাহান খান ও হোসেন সরদারের নেতৃত্বে তার লোকজন সাইফুল ও তার ভাইদের কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার একদিন পরেই সাইফুল ও আতাউর সরদারের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত হোসেন সরদার গ্রেপ্তার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে মূল অভিযুক্ত কৃষক দলের নেতা শাহ্জাহান খান।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘খোয়াজপুরে আলোচিত ঘটনায় আরও একজন মারা গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৪। নিহত তাজেলের লাশ ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মাদারীপুরে আনা হবে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ’