প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৫:১৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২০, ২০২৩, ১১:৫৪ অপরাহ্ণ
মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারে বানের জলের মতো আসছে মরণনেশা
মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারে বানের জলের মতো আসছে মরণনেশা
মাহবুব আলমঃ
মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারে বানের জলের মতোই পাচার হয়ে আসছে মরণনেশা ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। স্থল সীমান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ শিকারের নামে জেলে সেজে জলসীমাও অতিক্রম করছে মাদক পাচারকারীরা। ফলে সড়ক ও জলপথে পাচার হয়ে আসা মাদক উদ্ধারে পুলিশ-র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স চট্টগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং রেলওয়ে পুলিশের অভিযানে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪১০টি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। একই সময়ে আইস উদ্ধার হয়েছে ৭ কেজি ৪২৫ গ্রাম। সঙ্গে ফেনসিডিলসহ অন্য মাদক তো আছেই। ইয়াবা-আইস পাচারের শীর্ষ উপজেলা মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া। এ ছাড়া বান্দরবানের সীমান্ত উপজেলা আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েও আসে মাদক। মাদক পাচারের এসব পথ আটকাতে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে সর্বাধিক ইয়াবা-আইস পাচারকারী জেলা কক্সবাজারে নতুন রেলস্টেশন চালু হতে যাচ্ছে। এটিকে মাদক পাচারের ‘নতুন দুয়ার’ মনে করছেন খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই। আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করবেন বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরদিন থেকে রেলপথে সরাসরি যাত্রী পরিবহন না করলেও আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে যাত্রীসেবা শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। তখন যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি কার্যক্রম শতভাগ সঠিক না হলে ইয়াবা-আইস পাচারের আরেকটি নতুন রুট তৈরি হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই নতুন রেলপথে যাতে মাদক পাচার না হয় সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মত চট্টগ্রাম রেঞ্জের এক পদস্থ কর্মকর্তার। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে ব্যয় ১০ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার কোটি টাকায়। প্রকল্পের মাঝপথে প্রকল্পের অর্থ বাড়ানো হলেও মাদক পাচাররোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রকল্পভুক্ত করা হয়নি। প্রকল্প উদ্বোধনের আগমুহূর্তে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্যে মাদক পাচারে ফাঁকফোঁকর রয়ে যাওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো চিহ্নিত হচ্ছে। মাদক পাচাররোধে কক্সবাজার রেলস্টেশনে ফাঁকফোঁকর থাকার বিষয়টি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জে কর্মরত একজন পদস্থ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রেলপথ নির্মাণ করছে রেল মন্ত্রণালয়। তাদের কাজ নিয়ে আমার মন্তব্য করা উচিত হবে না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কক্সবাজার রেলস্টেশনটি আধুনিক হলেও সেখানে যাত্রীদের ব্যাগেজ তল্লাশির জন্য স্ক্যানার-আর্চওয়ে রাখা হচ্ছে না। স্ক্যানার-আর্চওয়ে ছাড়া সব যাত্রী ও তাদের ব্যাগ শতভাগ তল্লাশি করা রেলওয়ে পুলিশের দ্বারা সম্ভব হবে না। কারণ, এতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই সুযোগে মাদক পাচারকারীরা কৌশলে ইয়াবা-আইস নিয়ে ট্রেনে চড়ে বসলে নির্বিঘ্নে ঢাকা পৌঁছে যাবে। এতে ইয়াবা-আইস পাচার সহজ হবে। এটা বন্ধ করতে হলে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে অবশ্যই বিমানবন্দরের আদলে যাত্রী ও ব্যাগ তল্লাশি করতে স্ক্যানার-আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে। যাত্রীরা স্টেশনের প্রবেশপথে ব্যাগ স্ক্যানিং করবেন এবং আর্চওয়ে পেরিয়ে যাবে। তাহলে মাদক পাচাররোধ করা সহজ হবে। অন্যথায় কঠিন হবে।’
Copyright © 2024 নগর সংবাদ. All rights reserved.