রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় সোহাগ নামে এক যুবককে থানায় ডেকে নিয়ে পিটিয়ে অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমনকি হাতিয়ে নেওয়া টাকা কম হওয়ায় ভুক্তভোগী যুবককে থানার হাজতে ঢুকিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফের অর্থ আদায় করারও অভিযোগ মিলেছে।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর শাহ আলী থানায় এই ঘটনা ঘটে। তবে ভুক্তভোগী সোহাগ গত ৪ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরে কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমাদুল, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কামরুজ্জামান ও এএসআই বদরুজ্জামানের নাম উল্লেখ করেছেন। অবশ্য এই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর এসআই এমাদুলকে ভাষানটেক থানায় বদলি করা হয়েছে।
অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে ঘটনার কয়েকটি অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডও জমা দেওয়া হয়। কয়েকটি অডিও ও ভিডিও রেকর্ড বাংলানিউজের হাতেও এসেছে।
অভিযোগে বলা হয়, সোহাগের আপন ছোট ভাই রিজন ঘটনার দিন (১৬ অক্টোবর, ২০২৩) সকালে মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাট এলাকার ৮ নম্বর রোডে জাকিরের চায়ের দোকানে বসে ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন। এ সময় অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে (ইউনিফর্ম ছাড়া) মোটরসাইকেলে (হোন্ডা টিম) করে ওই চায়ের দোকানে আসেন। পুলিশ রিজনকে ধরে মোটরসাইকেলে তুলে থানায় নিয়ে যায়। ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় সোহাগ তার বন্ধু আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে এসআই এমাদুলকে মোবাইল ফোনে কল দেন। এমাদুল তাদেরও (সোহাগ ও তার বন্ধু আল আমিন) থানায় ডাকেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, থানায় গেলে সোহাগের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য। টাকা দিতে রাজি না হলে সোহাগ ও তার বন্ধু আল আমিনকে কয়েক দফা পেটায় পুলিশ। তাদের পকেটে থাকা ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সোহাগ ও তার বন্ধু আল আমিনকে থানার হাজতে ঢুকিয়ে আরও টাকা দাবি করেন অভিযুক্তরা। এরপর ওই তিন পুলিশ সদস্যের সোর্স মন্টুর বিকাশে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ওইদিনই থানার হাজতখানা থেকে ছাড়া পান সোহাগ, আল আমিন ও রিজন।
শাহ আলী থানার এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসআই এমাদুল ও তার হোন্ডা টিমের অপর দুই পুলিশ সদস্য সব সময় টাকার জন্য মরিয়া হয়ে থাকতেন। থানা এলাকায় এই হোন্ডা টিমের (তিন পুলিশ সদস্য) বিরুদ্ধে মানুষকে ফাঁসিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের (হোন্ডা টিম) অপকর্মের সহযোগী ছিলেন সোর্স মন্টু ও রিপন।
এসআই এমাদুলের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে এসআই এমাদুল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তিন দিন আগে ভাষানটেক থানায় এসেছি। ওই দিন মন্টু নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে সোহাগ ও তার সহযোগীদের ধরে নিয়ে এসেছি। পরে তারা নিজেদের মধ্যে মিলমিশ করলে বাদীর জিম্মায় থানার হাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মন্টু নামে আমার কোনো সোর্স নেই।
যদিও বাংলানিউজের হাতে আসা ফোনালাপের রেকর্ডে সোর্স মন্টুকে অর্থ আদায় সংক্রান্ত কথা বলতে শোনা যায়।
শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের। আমি ওই সময় আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। তবে এই ধরনের একটা অভিযোগ শুনেছি। এটা ডিসি অফিস (মিরপুর বিভাগ) থেকে তদন্ত করবে।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, এসআই এমাদুল কয়েকদিন আগে শাহ আলী থানা থেকে চলে গেছেন। অবশ্য এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই বদরুজ্জামান এখনো শাহ আলী থানায় কর্মরত।