‘ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় বসবাস করেন মো. ফিরোজ (২২)। প্রতিদিনের মতো ২৭ জুন তার ইজিবাইক নিয়ে জীবিকার সন্ধানে বের হন।
কিন্তু ওই দিন বিকেল ৫টার পর থেকে তার কোনো হদিস পায় না তার পরিবার। ফিরোজের মোবাইলফোনও বন্ধ। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর দিন (২৮ জুন) দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১৬৬৯) করেন ফিরোজের বাবা কিবরিয়া গাজী। ’
র্যাব জানায়, হাসনাবাদ গরু হাটে যাওয়ার সময় যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী একটি চক্রের সদস্যরা বিস্কুটে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে ইজিবাইকচালক ফিরোজকে খাইয়ে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাই করে। বেহুশ অবস্থায় ভুক্তভোগীকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ইজিবাইক থেকে ফেলেও দেয় ছিনতাইকারীরা।
এ ঘটনার পর দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ও মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে ছিনতাই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০।
বুধবার (৫ জুলাই) বিকেলে কেরাণীগঞ্জে র্যাব-১০- এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার ইজিবাইক ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা হলেন শফিকুল ইসলাম (৪৫), নুর ইসলাম (৩২), গোলাম রাব্বী (২৫), আব্দুর রহমান (২৭), মোছা. সীমা আক্তার (২৮) ও শাহনাজ (৩৭)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট, চেতনানাশক ওষুধ, ভুক্তভোগী ফিরোজের মোবাইলফোন ও একটি চোরাইকৃত সিএনজি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০- এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৪ জুলাই ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শফিকুল ইসলাম, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বী, আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ওই দিন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকা থেকে সীমা ও আজ মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে শাহনাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই পেশাদার ছিনতাই চক্রের সদস্য।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২৭ জুন শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বী, আব্দুর রহমান, সীমা ও শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান করে। নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বী, সীমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরু হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগী ফিরোজের ইজিবাইক ভাড়া করে। গরুর হাটে যাওয়ার পর নুর ও রাব্বীকে ফিরোজের সঙ্গে চা বিস্কুট খাওয়ার কথা বলে সীমা ও শাহনাজ গরু হাটে চলে যায়। পরে নুর ও রাব্বী তাদের কাছে থাকা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুটের অনুরূপ এক প্যাকেট বিস্কুট একটি চায়ের দোকান থেকে কিনে। পরে তারা কৌশলে ওই বিস্কুটের প্যাকেটটি পরিবর্তন করে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট ফিরোজকে খাওয়ায়।
পরে নুর ও রাব্বী ফিরোজসহ ইজিবাইক এ গিয়ে বসে। ফিরোজ ধীরে ধীরে বেহুশ হতে থাকলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজকে সেখান থেকে নিয়ে কাউটাইল এলাকায় চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর নুর ও রাব্বী ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় তাদের দলনেতা শফিকুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন। শফিকুল ওই ইজিবাইকটি শহীদ নামে এক ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় বলে জানা যায়।
র্যাব-১০- এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার শফিকুল ওই অজ্ঞানপার্টি চক্রের দলনেতা। তিনি পেশায় একজন সিএনজিচালক। ওই পেশার আড়ালে তিনি চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে সিএনজি/ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেন। তার কাছ থেকে চোরাইকৃত সিএনজি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, অসাধুভাবে চোরাই মালামাল বেচাকেনাসহ চারটি মামলা আছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার নুর পেশায় একজন ট্রাকের হেলপার। তিনি শফিকুলের নেতৃত্বে সিএনজি/ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে। গ্রেপ্তার রাব্বী পেশায় একজন ইজিবাইকচালক। তিনি শফিকুলের নেতৃত্বে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানো ও ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করে। গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান পেশায় একজন সিএনজিচালক। তিনি চক্রের ছিনতাই করা সিএনজি চালানোর দায়িত্ব পালন করেন। তার কাছ থেকে ভুক্তভোগী ফিরোজের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে গ্রেপ্তার শাহনাজ বিস্কুটের ক্রীমের সঙ্গে মিশ্রণ করার জন্য বিক্রি নিষিদ্ধ চেতনানশক ওষুধ অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করতেন। তিনি শফিকুলের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেখানে থেকে তারা বিস্কুটের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে ইজিবাইক/সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করতো।
গ্রেপ্তার সীমা শাহনাজের সঙ্গে বিস্কুটের ক্রীমের সঙ্গে চেতনানশক ওষুধ মেশানো ও সিএনজি/ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন। সীমার কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট ও চেতনানাশক ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ছে বলেও জানান তিনি।