লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনতাই করতে গিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিরালাল দেবনাথকে (৫৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকারেক্তি দিয়েছেন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জিয়াউর রহমান তুষার, সজিব হোসেন বাহার ও মোবারক হোসেন।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার আকতার হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এবি ছিদ্দিক, পুলিশের ডিআইওয়ান একেএম আজিজুর রহমান মিয়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটো উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার তুষার রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের লুধুয়া গ্রামের বাসিন্দা, বাহার বামনী গ্রামের ও মোবারক দলাল বাজার এলাকার বাসিন্দা। তাদের লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি আকতার হোসেন জানান, হত্যার ঘটনার পর পরই রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে পুলিশ। কিন্তু অপরাধীরা তাদের সব মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। তারা নতুন ফোন ব্যবহার ও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই তুষারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার প্রত্যন্ত হাওর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্যমতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাহারকে। এরপর রায়পুর থেকে মোবারক নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসপি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ছিল ছিনতাইকৃত। ঘটনার পরই ওই মোটরসাইকেলটি হাত বদল করে ফেলে তারা। মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়। ডাকাতিসহ বিভিন্ন ঘটনায় মোবারকের বিরুদ্ধে ২০টি ও বাহারের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। তবে তুষারের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা নেই। এ চক্রে সে নতুন। ঘটনার সময় তুষার মোটরসাইকেল চালিয়েছে। মোবারক ও বাহার মোটরসাইকেলে বসা ছিল।
এসপি বলেন, প্রতিদিনই দোকান বন্ধ করে হিরালাল টাকা ও স্বর্ণালংকার সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যেতেন। এতে পরিকল্পিতভাবে তার কাছ থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনতাইয়ের ছক সাজাই অপরাধীরা। মোবারক কাজির দিঘীরপাড় বাজারে থেকে মোবাইল ফোনে হিরালালের অবস্থান জানায়। পরে হিরালাল দোকান বন্ধ করে বের হলে মোবারক, বাহার ও তুষার মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন তুষার মোটরসাইকেলেই ছিল। বাহার ও মোবারক নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। পরে বাহার স্বর্ণালংকারসহ টাকা ছিনতাইয়ের জন্য হিরালালের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে। একপর্যায়ে হিরালালের চিৎকারে লোকজন আসতে শুরু করলে বাহার ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করে। পরে তারা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। হিরালালের চিৎকারের কারণে তারা স্বর্ণালংকার ছিনতাই করতে পারেনি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। এ ঘটনার আরও বিস্তারিত জানতে তদন্ত চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) রাতে সদর উপজেলার কাজির দিঘীর পাড় বাজারের মাতৃ শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী হিরালাল দেবনাথকে উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামের তেঁতুলতলা এলাকায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে প্রীতম দেবনাথ অজ্ঞাতদের আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।