লাইলাতুল কদর। যা শবে কদর নামে পরিচিতি। শেষ দশকের কোন কোন রাতে তা অনুষ্ঠিত হতে পারে; এ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ জানা না থাক'লেও নবিজি ৫টি রাতের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনাগুলো কী?
মহিমান্বিত ও মর্যাদার এ রাতকে কোরআনুল কারিমে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাজিল করেছেন। এ সুরায় পবিত্র রাতের ফজিলত ও বরকতের বর্ণনা ওঠে এসেছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
'নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জান? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। শান্তিই শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।' (সুরা আল-কদর)
এ ছাড়াও কোরআনুল কারিমের অন্য একটি সুরায় এ মর্যাদার রাত সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় (লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের কাছে) স্থিরিকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।' (সুরা দুখান : আয়াত ২-৬)
মর্যাদার এ রাত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর তথা (মর্যাদার নির্ধারিত রাতে) ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।' (বুখারি)
লাইলাতুল কদর রাতটি মর্যাদার। এ রাতে দুনিয়ার মানুষের ভাগ্য নতুন করে সাজানো হয়। গুনাহে নিমজ্জিত বান্দা আলো জ্বলমলে জীবন লাভ করে। পরবর্তী বছরে পথ ও পাথেয় সব কিছু পেয়ে থাকে। এ জন্য রাতটি মুসলিম উম্মাহর কাছে মর্যাদার রাত।
কোন দিন বা তারিখে আসে এ রাত
এ রাতের জন্য কোনো দিন-রাতই সুনির্দিষ্ট না থাকলেও তা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯) অনুসন্ধান করার কথা বলেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'রমজানের শেষ ১০ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।' (বুখারি)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর।' (বুখারি)
২৭ রমজানের রাতে কদর
২৭ রমজানের রাতে অর্থাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাত লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাও অন বেজোড় রাতের চেয়ে বেশি। এ সম্পর্কেও হাদিসের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা ২৭ রমাজনের রাতে অনুসন্ধান করে।' (মুসনাদে আহমাদ)
সম্ভাবনাময় অন্য রাত
মর্যাদার এ রাত হওয়ার ব্যাপারে ২৭ তারিখের সম্ভাবনা বেশি। তারপর যে বেজোড় রাতগুলোর সম্ভাবনা বেশি তাহলো-
দ্বিতীয় : ২৫ রমজানের রাত।
তৃতীয় : ২৯ রমজানের রাত।
চতুর্থ : ২১ রমজানের রাত।
পঞ্চম : ২৩ রমজানের রাত।
শবে কদরের বিশেষ দোয়া
এ রাতটি পাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে ইতেকাফে অতিবাহিত করতেন। যাতে কোনোভাবে শবে কদর থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। শবে কদরের বিশেষ দোয়া প্রসঙ্গে হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে। আর তাহলো-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
হাদিসে বর্ণিত লাইলাতুল কদরের বিশেষ নিদর্শন
১. গভীর অন্ধকার হবে না রাতটি।
২. গরম ও শীতের তীব্রতা থাকে না। অর্থাৎ সুন্দর শান্তিদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করবে।
৩. মৃদু শীতল (বসন্তের) বাতাস প্রবাহিত হবে।
৪. সে রাতের ইবাদতে মানুষ অন্য দিনের তুলনায় তৃপ্তিবোধ করবে।
৫. প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তিকে স্বপ্নে তা জানিয়ে দেয়া হয়।
৬. এ রাতে রহমতের বারিধারা (বৃষ্টি) বর্ষিত হয়।
৭. পূর্ণিমার চাঁদের মতো হালকা আলোক রষ্মিসহ সূর্য উদয় হবে।' (ইবনে খুযায়মাহ, বুখারি, মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদার রাত লাইলাতুল কদর দান করুন। এ রাতে বরকত ও কল্যাণে মুমিন বান্দার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দিন। পরবর্তী পুরো বছরের কল্যাণ বরকত ও উত্তম রিজিকে পরিপূর্ণ করে দিন। আমিন।