প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ৯:৩৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ২, ২০২১, ১১:৫১ অপরাহ্ণ
লালমনিরহাটে বৃদ্ধাকে গলাধাক্কা দিয়ে গুরুতর জখম করা ও নববধূকে জোর করে স্বাক্ষর নেয়া -চেয়ারম্যানের
নগর সংবাদ।।লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: ত্রাণের স্লিপ চাওয়ায় শতবর্ষী বৃদ্ধাকে গলাধাক্কা দিয়ে গুরুতর জখম করা ও নববধূকে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার মামলায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউপির চেয়ারম্যান শওকত আলী ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৮ জুলাই) সকালে আদিতমারী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। গত সপ্তাহে এক ব্যবসায়ীকে সালিসে মারধর ও গত বছর নববধূকে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার মামলায় কারাগারে যান শওকত আলী। এর আগে সোমবার (১৯ জুলাই) রাতে আহত শতবর্ষী বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে চেয়ারম্যান শওকত আলী, তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও মেয়ে সুহিন আক্তারের (১৯) বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় অভিযোগ করেন। বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি মদনপুর গ্রামের মৃত ছপির উদ্দিনের স্ত্রী। জানা গেছে, সম্প্রতি লকডাউনে রিকশাচালক নুরুজ্জামানের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় তার মাকে নিয়ে নিদারুন অর্থকষ্টে পড়েন তিনি। ঈদের কিছুদিন আগে পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বৃদ্ধা আলেমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি গ্রহণ করেন। সেই ত্রাণ নিতে সোমবার সকালে পরিষদে যান আলেমা। তখন চেয়ারম্যান তার বাড়িতে রাখা স্লিপ নিয়ে আসতে বললে বৃদ্ধা পরিষদের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত স্লিপের জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ করে চেয়ারম্যান বাড়িতে এলে স্লিপ দাবি করেন আলেমা। এ সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও মেয়ে সুহিন আক্তার (১৯) আলেমাকে গলাধাক্কা দিলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এ সময় তার দাঁত ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে এবং হাত-পা ও বুকে আঘাত পেয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পরে পল্লিচিকিৎসক ডেকে বৃদ্ধাকে নিজ বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন চেয়ারম্যান। এদিকে মায়ের এই খবরে ছেলে নুরুজ্জামান স্থানীয়দের সহায়তায় তার মাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় নুরুজ্জামান বাদী হয়ে চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে বুধবার সকালে স্ত্রীসহ চেয়ারম্যানকে আদিতমারী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাটি শুনে বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। তিনি বৃদ্ধাকে অর্থসহায়তা প্রদানসহ ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বৃদ্ধাকে মারধর করা মামলায় চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুরের পর তাদের দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এদিকে গত সপ্তাহে মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে সালিশ বৈঠকে স্ত্রী-সন্তানের সামনে এক ব্যবসায়ীকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে আদিতমারী থানায় চেয়ারম্যান শওকত আলীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন আহত ব্যবসায়ী। সেটিও রহস্যজনকভাবে নথিভুক্ত হয়নি। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ নববধূকে আটকে জোর করে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনা মামলায় জেলা আদালতের বিচারক দায়রা জজ কে এম রহমান চেয়ারম্যান শওকত আলীর জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এবং টিসিবির দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের থানায় লিখিত এজাহার করেছিলেন নুর মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী।
Copyright © 2024 নগর সংবাদ. All rights reserved.