নগর সংবাদ।।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন উপস্থিত ছিল অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা।মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সারাদেশে স্কুল-কলেজ খুলেছে। শুরু হয়েছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ১৭ মাস পর স্কুল-কলেজ খুললেও প্রথম দিন ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা থেকে এমন তথ্যই জানা গেছে।
এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন মাধ্যমিক থেকে কলেজ স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠদান চলছে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) জুড়ে দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনা অনুসরণ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করে। ছাত্রছাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে সারিবদ্ধভাবে তাদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এক বেঞ্চে একজন করে জেড আকারে বসানো হয় শিক্ষার্থীদের। অনেক স্থানে সাত ফুটের বেঞ্চে দুজন করে বসানো হয়। সীমিত আকারে কয়েকটি স্তরে ধাপে ধাপে ক্লাস নেওয়া হয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে অনেক অভিভাবক প্রবেশ পথের গেটে ভিড় জমান। সেসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধিও কিছুটা ঢিলেঢালা দেখা যায়।
শাখা পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন রোববার সন্ধ্যায় বলেন, সারাদেশে ১৯ হাজার অনুমোদিত স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিদিনের তথ্য প্রতিদিন পাঠাচ্ছে। বিকেল ৩টার মধ্যে ছক আকারে এসব তথ্য মেইলে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৮৮টি বিদ্যালয় থেকে প্রথম দিনের সার্বিক তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রথম দিন সারাদেশে সব বিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল।
জানা গেছে, রাজধানীর কবি কাজী নজরুল সরকারি কলেজে রোববার বিভিন্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৩১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতির হার ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। ১১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে এদিন উপস্থিত ছিলেন ১১৩ জন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে প্রথম শ্রেণির ৩৭৯ জনের মধ্যে ৩১১ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতির হার ৮২ শতাংশ। দশম শ্রেণির ৪১৫ জনের মধ্যে ৩৪৩ জন উপস্থিত ছিল, উপস্থিতির হার ৮২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এদিন স্কুলটির মোট ১৪৯ জন শিক্ষকের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, সরকারি স্কুল-কলেজ ও বেসরকারি শীর্ষ মানের স্কুল-কলেজে প্রথম দিন শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক বেশি। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী প্রথম দিন ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে। যারা আসেনি, তিনদিন পেরিয়ে গেলে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি ছোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেছে। অনেকে গ্রামের বাড়িতে, অসুস্থ কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়বে বলে জানান তিনি।
খোঁজ জানা গেছে, প্রায় দু’বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যাপকভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমান পরীক্ষা আয়োজনের কথা থাকলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অন্যান্য স্থানের পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মধ্যে পড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সম্প্রতি সীমিত আকারে শিক্ষার্থীদের সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সে মোতাবেক রোববার থেকে সীমিত আকারে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে কি না, তা দেখতে রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে যান। সেখানে ক্লাসের মধ্যে আর্বজনা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষসহ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।