ঢাকা প্রতিনিধি।।
একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ শিক্ষার্থীদের নানান দাবি-দাওয়া এবং নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য কারা হচ্ছেন, তা নিয়েও সতর্ক শিক্ষকরা। সব মিলিয়ে সহসাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালু নিয়ে সংশয়ের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনায় রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে ১ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা। আর কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানায় আইএসপিআর।
তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার মধ্যেই ছিল গা-ছাড়া ভাব।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্র জানায়, গত ৭ আগস্ট থেকে অনেক প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হচ্ছিল। তবে উপস্থিতি কম ছিল। অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তার শঙ্কা ছিল। পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসায় রোববার থেকে স্কুল-কলেজে যথারীতি ক্লাস হবে।
মাধ্যমিক স্তরের মাদরাসা, কামিল ও ফাজিলে যথারীতি ক্লাস চালু হবে বলে জানিয়েছে মাদরাসা অধিদপ্তর এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই নির্দেশনা দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরও।
জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে যে, রোববার থেকে পুরোদমে ক্লাস হবে। শিক্ষায় বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এটা কাটিয়ে উঠতে চলতি শিক্ষাবর্ষের বাকি সময়টা পুরোদমে ক্লাস হওয়া জরুরি।
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের কারণে প্রশাসনিক শূন্যতায় পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ক্লাস চালুর নির্দেশনা দেওয়ার মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও নেই ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে রোববার থেকে বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালু নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও ক্লাস শুরু নিয়ে ঢাবি, রাবি ও চবির কোনো নির্দেশনা পাননি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনো প্রশাসন না থাকায় খুলবে না। নতুন প্রশাসন আসা পর্যন্ত কার্যক্রম চালু হবে না। নতুন প্রশাসন নিয়োগের পরে সিদ্ধান্ত হবে কখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে।
একই কথা জানিয়েছেন রাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসানও। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নেই। ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। তাই শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্য না থাকায় এ মুহূর্তে সিন্ডিকেট সভা ডাকাও সম্ভব নয়।
অন্যদিকে গত ৭ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়। উপাচার্য পদত্যাগ করলেও ১১ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে।
সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ১২ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোববার থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ১২ আগস্ট থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। ২৫ আগস্ট থেকে সেখানে সশরীরে ক্লাস চলবে।
এদিকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলছে রোববার, ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৫ আগস্ট। তবে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত জানায়নি।