দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষবারের মতো সিক্ত হলেন জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১টায় রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে আনা হয় প্রয়াত মহাসচিবের মরদেহ।
এসময় তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের চোখের জলে ভাবগম্ভীর পরিবেশ তৈরি হয়। অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকাল ৯টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালে মারা যান জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডাকসু জিএস জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
দলের এ শীর্ষ নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে এসে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, তিনি (বাবলু) ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আশির দশকে তিনি ডাকসুর জিএস হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি সদা প্রস্তুত ছিলেন। এমন একজন দক্ষ নেতাকে হারিয়ে জাতীয় পার্টিতে শূন্যতা সৃষ্টি হলো।
জাপার কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, রাহ্গীর আলমাহি সাদ এরশাদসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও শেষবারের মত বিদায় জানাতে আসেন বাবলুকে।
জাপার কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তিনি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি করেছেন, মহাজোট গঠনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দলের জন্যই, দলের কাজ করতে গিয়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি চিরদিনের মত আমাদের কাছ থেকে চলে গেলেন, এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন বাবলু। গত ৬ সেপ্টেম্বর তার করোনা পজিটিভ হয়। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের পক্ষে প্রচারণায় যোগ দিতে টানা পাঁচদিন সিলেটে অবস্থান করেন তিনি।
পরে ঢাকায় ফিরে অসুস্থ বোধ করলে তাকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। করোনা পজিটিভ হলে ৬ সেপ্টেম্বরই তাকে ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন নেওয়া হয় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের আইসিইউতে। তিনি আগে থেকে অ্যাজমা ও হার্টের জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। করোনা শনাক্তের পর তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নামাজে জানাজা বাদ এশা গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে।
প্রয়াত মহাসচিব স্মরণে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত দলটির প্রতিটি দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও কালো পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
আগামীকাল রোববার বিকেল ৩টায় জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাকরাইল চত্বরে প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুতে শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ পার্টি শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি সম্পন্ন করেন।
১৯৮১-৮৩ মেয়াদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৮৫-৮৬ সালে শিক্ষা উপমন্ত্রী, ১৯৮৬-৮৭ সালে বন্দর ও নৌপরিবহন উপমন্ত্রী, ১৯৮৭ সালে অর্থ প্রতিমন্ত্রী, ১৯৮৭-৮৮ সালে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ও ১৯৮৮-৯০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বাবলু।