বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তথাকথিত বিরোধী দল মিথ্যা বলে বলে স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়।
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এ স্বাধীনতা আমরা লাখো শহীদের রক্তে পেয়েছি। এ স্বাধীনতা কোনো মতে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না। দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের যারা তথাকথিত বিরোধী দল আছে, মিথ্যা বলে বলে এ স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়। তারা তা পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম ৮১ সালে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে। আমি জানতাম না কোথায় আমি থাকবো, কীভাবে চলবো কোনো চিন্তা করিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, শুধু একটা চিন্তা করেছি এ দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে। এদেশের মানুষকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে। গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির কোনো এক নেতা সারাদিন মাইক লাগায়ে বসে থাকে। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। ময়মনসিংহবাসী আপনাদের কাছে জিজ্ঞেস করি এ যে আমরা ৭৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং সব মিলিয়ে ১০৩টি প্রকল্প, এগুলো কী ধ্বংসের নমুনা? ওরা এত মিথ্যা কথা বলে কেন? আসলে মিথ্যা কথা বলা ওদের বেসাতি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নাকি কিছুই পারিনি। আজকে যে বাংলাদেশটা ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এ ডিজিটাল বাংলাদেশের বদলেতে তো এখন দূরে বসেও দেশের মানুষ কথা বলে, রাজনীতিও করে, সবই করে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুফলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি বলেই তো আজকে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। আর যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম, বিদ্যুৎ না বাড়াতাম, তাহলে এত কথা মাইকে আসতো কীভাবে। তো আমরা যে কিছুই করিনি, আমাদেরই করা জিনিস ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের স্বভাব। লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি এটাই তাদের স্বভাব।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের জনগোষ্ঠী ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করবে, স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে ওঠবে। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট, আমাদের কৃষি হবে স্মার্ট, আমাদের স্বাস্থ্য হবে স্মার্ট, তৃণমূল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উন্নত জীবন হবে। প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এ মর্যাদা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আগামীতে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভাগ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নকাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জনসভার শুরুতে শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ১০৩টি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও প্রায় দুই হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভা মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রঙিন শাড়ি, হাতে পতাকা, মাথায় রঙিন ক্যাপ পরে আসেন অনেকে। উৎসব মুখর পরিবেশে ঢাক-ঢোলের তালে তালে নেচে-গেয়ে আসেন অনেকে। দুপুর নাগাদ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হন। জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ। রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা মাঠ।
জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, শফিউল আলম নাদেল, মির্জা আজম, আহমদ হোসেন, অসিম কুমার উকিল, বিপ্লব বড়ুয়া, মারফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মফিদুল হক খান দুলাল, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু।
সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম। যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতুর রহমান শান্ত।