নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সালামের বেশি প্রসার করো, তাহলে শান্তি ও নিরাপত্তা পাবে।’ সালাম হলো শান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। শুধু তা-ই নয়, প্রকৃত মুমিন হওয়ার অন্যতম উপায়ও সালাম। কিন্তু এটি কীভাবে সম্ভব?
সালাম দেওয়া প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। কিন্তু যাকে সালাম দেওয়া হলো, তার জন্য সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। এ সালামের মাধ্যমেই আসে শান্তি ও নিরাপত্তা। আবার সালামের প্রসারেই একজন মানুষ প্রকৃত মুমিনে পরিণত হয়। জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তাও রয়েছে সালামের প্রসারে। এসবই উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-
১. সালাম প্রকৃত মুমিন হওয়ার উপায়
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় অবহিত করবো না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তাহলো- তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (আবু দাউদ, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
২. সালামে নেকি বেড়ে যায়
হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললো- ‘আসসালামু আলাইকুম।’ তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসলো।
>নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দশ নেকি।
এরপর আরেকজন এসে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলো।
> তিনি বললেন, বিশ নেকি।
এরপর আরেকজন এসে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতাল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারও জবাব দিলেন, লোকটি বসলো।
> তিনি বললেন, ত্রিশ নেকি।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ)
৩. সালাম সর্বোত্তম কাজ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলো, ইসলামের কোনো দিকটি উত্তম? তিনি বললেন, তোমার পরিচিত ও অপরিচিতদের খাবার খাওয়াবে এবং সালাম দিবে।’ (আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
৪. সালাম জান্নাতে যাওয়ার উপায়
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা দয়াময় রহমানের ইবাদত করো, মানুষকে আহার করাও এবং সালামের বেশি প্রচলন করো, তাহলে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান)
৫. সালাম সুসম্পর্ক গড়ে দেয়
হজরত আবু আইউব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা হালাল নয়। অবস্থা এই দাঁড়ায় যে, তাদের দুই জনের সাক্ষাত হলে একজন এদিকে এবং অপরজন ঐদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে আগে সালাম দেয়।’ (বুখারি, মুসলিম, দারেমি, তিরমিজি)
এ কারণেই সাহাবাদের মধ্যে সালাম আগে দেওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত-
১. হজরত বশির ইবনে ইয়াসার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার আগে কেউ সালাম দিতে পারতো না। (আদাবুল মুফরাদ, আবু আওয়ানা, ইবনে হিব্বান)
২. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে গমনকারীকে সালাম দিবে এবং পদব্রজে গমনকারী বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে। আর দুই পথচারীর মধ্যে যে প্রথম সালাম দিবে সে অধিক উত্তম।
৩ হজরত আবু আইউব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা হালাল নয়। অবস্থা এই দাঁড়ায় যে, তাদের দুই জনের সাক্ষাত হলে একজন এদিকে এবং অপরজন ঐদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে আগে সালাম দেয়।’ (বুখারি, মুসলিম, দারেমি, তিরমিজি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাপকভাবে সালামের প্রচার ও প্রসার করা। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করা। নিজেদের প্রকৃত মুমিন হিসেবে গড়ে তোলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সালামের বরকত ও কল্যাণে পাওয়ার তাওফিক দান করুন। নিজেদের প্রকৃত মুমিন করে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।