নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি- নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতে বসত বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ বিরোধপূর্ণ জমি দখলের চেষ্টায় এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় শাহাবুদ্দিন ও তার সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও নীরব ভুমিকা পালন করে বলে ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগ। হামলাকারীরা দুটি বসতঘর ভাংচুর করে এবং ঘরে থাকা সকল আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দেয়। সন্ত্রাসীদে হামলায় আলমগীর, সাইফুল, সজীব সিদ্দিকী, বিদ্যুৎ ও এ এইচ এম মাহবুব নামে পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আলমগীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল চৌধুরীবাড়ী বৌ-বাজার এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বলে যানা যায়।
আমরা এই জমিতে ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। আমার স্বামী এখানেই মারা গেছে। এই জমির প্রকৃত মালিক মৃত আব্দুল রফিক আমাদেরকে এখানে থাকতে দিয়েছে। বর্তমানে তার ছেলে সিরাজুল ইসলাম গং পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে এই জমির মালিক। বিগত দিনে কেউ এই জমির মালিকানা দাবি করে নাই। কিন্তু কয়েক মাস ধরে সাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জমিটি দখলে নিতে ঝামেলা করছে। বিউটি বেগম আরো বলেন,
। এ বাড়ীতে থাকা মায়ানূর নামে আরেক নারী জানান, আমি আমার স্বামী সন্তানদের নিয়ে ১০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। ঈদের ছুটিতে ঘর তালা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। বাড়ি থেকে এসে আজ সকাল ৯টায় কাজে চলে যাই। কিছুক্ষন পরে খবর পাই আমাদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে এসে দেখি আমদের সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে। রান্নার চুলা, সেলাই মেশিনসহ গুরুত্বপুর্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। মৃত রফিকের ছেলে বয়োবৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম জানান, গোদনাইল মোজার সিএস খতিয়ান ১৭০ ও দাগ নং ৯৬১ এর মালিক ছিলেন সমির আলীর পুত্র লাল চাঁন ও কালাচান। জমির পরিমান লালচান এর ১৪ ও কালাচান এর ১৪ শতাংশ ভূমি। এস এ খতিয়ান নং ৬৭১ দাগ ৯৬১ তে লাল চানের নাম রেকর্ড ভূক্ত হলেও কালাচান এর নামের পরিবর্তে চেরাগ আলীর পুত্র আলিমুদ্দীনের নাম আসে।
আর এস খতিয়ান নং ৪৩৮ দাগ নং ২৭৩৭ একই রুপ রেকর্ড হওয়ায় রেকর্ড সংশোধনের জন্য কালাচানের ওয়ারিশান তাদের ১৪ শতাংশ জমি মালিকানা হস্তান্তর করাসহ নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ১৩৪/১২। তিনি দাবি করেন, চেরাগ আলীর পুত্র আলিমুদ্দিন রেকর্ড ভূক্ত হয়ে কাগজে মালিকানা হলেও সরেজমিনে কোন জমি দখলে না থেকেই শাহাবুদ্দীনের কাছে ৯ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রি করে লালচান অথাৎ আমাদের জমির চৌহদ্দি দিয়ে। সাহাবুদ্দিন তখন থেকেই সমস্যার সৃষ্টি করছে আমাদের সাথে ।
সে আমাদের পৈতৃক ভূমি হতে উচ্ছেদ করে জবর দখল করতে চাইছে। সাইন বোর্ড লাগাতে আসা জমির মালিক দাবি করা শাহাবুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ম্যানেজার রায়হান জানান, শাহাবুদ্দিনসহ আমরা জমিতে সাইনবোর্ড লাগাতে যাই। এবং ওই জমিতে সাইনবোর্ড লাগতে গেলেই ও উচ্ছেদ করতে গেলেই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে আমিসহ আমরা কয়েকজন আহত হই। এদিকে র্যাবের উপন্থিতিতে হামলা ও সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোবাইলে ধারণকৃত তথ্য চিত্র মুছে ফেলার বিষয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া র্যাব-১১’র কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার একেএম মনিরুল আলম বলেন, আমাদের উপস্থিতি মারামারি হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে আমরা যাওয়ার পর সেখানে অনেক জটলা দেখি। এক পর্যায়ে আমাদের দেখে সবাই ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমরা বলে আসি স্থানীয় সালিশী অথবা আইনশৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে উভয় পক্ষ বিষয়টি মিমাংসা করে নিবেন। তানাহলে আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা করবেন। এখানে এনিয়ে এলাকায় কোন রকম অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে।
কে কোন পক্ষের লোক তা আমরা বিচার বিবেচনা করবনা। শান্তী শৃংখলা রক্ষার্তে যা করণীয় তা করা হবে। তবে তিনি সাংবাদিকের মোবাইল ও পরিচয়পত্র নিয়ে গিয়ে মোবাইলের তথ্যচিত্র মুছে ফেলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। ঘটনাস্থলে যাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জানান, আমরা যখন গেছি সেখানে র্যাব উপস্থিত ছিলো। তবে মারামারির কোন কিছু আমরা পাইনি। এঘটনায় উভয় থানায় অভিযোগ করেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মশিউর রহমান পিপিএম (বার) বলেন, এ ঘটনায় উভয় পক্ষের দায়ের করা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। একটু হাতাহাতি হয়েছে বলে জানতে পারি। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায় এই জমিনিয়ে কিছু দিন পর পর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। শাহাবুদ্দিন আইন ও সমাজের জনপ্রতিনিদের কথা অমান্য করে ক্ষমতা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছু দিন আগে সে স্হানীয় এলাকার কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা কে চাঁদা বাজির অভিযোগ তুলে। সমাজের যেই ন্যায় কথা বলে এবং তার অনৈতিক কাজে বাঁধা দেই তাকেই শাহাবুদ্দিন ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করে হয়রানি করে থাকে। আমরা এলাকাবাসী এখন আতঙ্কে। এ বিষটির একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই।