কোন ধরনের পরিবেশগত আইনের তোয়াক্কা না করেই সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা জনবসতি এলাকায় ও ত্রী-ফসলী জমিতে গড়ে উঠা বিসমিল্লাহ নামে চালকল (চাতাল )অটো রাইসমিল স্থাপনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা সাধারণ জনগণ ।
এদিকে,বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের চান্দাইকোনা এলাকায় ৬৭ শতক ফসলি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে বিস্মিল্লাহ চালকল (অটো রাইস মিল) চাতাল স্থাপনের অপচেষ্টা চলছে । এই চাতালটি চালু হলে মিলের নিঘৃত বর্জে ফসলি জমিসহ এলাকার চারপাশের পরিবেশ দূষণে নানা ধরনের স্বাস্থগত সমস্যা তৈরি হবে । কেননা চাতালের নিঘৃত ধোঁয়া ও উড়ন্ত ধানের তুষে আশেপাশের চারদিকে কলুষিত , নিঃশ্বাস নেয়ার মত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে দিন দিন । এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও যেনো নাকে তৈল ঢেলে ঘুমোচ্ছে ! সম্প্রতি স্থানীয় একটা ফার্মেসিতে খবর নিয়ে জানা যায় এলাকার অনেক লোকই ইদানিং আশেপাশে গড়ে অবৈধ এসব চাতালের কারনে প্রায় অসুস্থ হয়ে স্বাসকষ্ঠের বড়ি খায় । বয়স্ক ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ কৃষকরা ফসলি জমিতে চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরিবেশের মারাত্বক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে মিলটি বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক সহ তৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এস.এম সোহাগ নামের এক স্থানীয় গ্রামবাসী কৃষক। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,উপজেলার চান্দাইকোনা বাজারের পাশে জনবসতি এলাকায় পরিবেশগত আইন ও নিয়মনীতি না মেনেই তিন-ফসলি জমিতে "রিয়া" নামে আরেকটি অটো মিল গড়ে তোলা হয়েছে। এই অটো মিলের অন্তরালে আনোরুল ইস: গংয়েরা "বিসমিল্লাহ "অটো রাইস মিল) নামে আরেকটি মিল স্থাপন করছে।
এ মিলটি চালু হলে এর বর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও কালো ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল-মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পল্লীবিদ্যুৎ সাব-অফিসসহ বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হবে । একই সঙ্গে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ছাড়াও স্থানীয় জনসাধারনের চরম স্বাস্থগত দুর্ভোগ পোহাতে হবে । সেই সাথে নষ্ট হবে চাতালের আশেপাশে অবস্থিত কৃষকের তিন ফসলি চাষাবাদের জমি টুকুও । একই সঙ্গে নষ্ট হবে জমিতে থাকা ঘর-বাড়ি, গাছপালা ইত্যাদি । এ সকল বিবিধ কারনে অপরিকল্পিতভাবে দুটি চাতাল অটোরাইস মিল নির্মাণ বন্ধ সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোড় দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জমি মালিক এস.এম সাগর, আব্দুর রাজ্জাক শেখ, নিজাম উদ্দিন আকন্দ, জহুরুল ইসলাম আকন্দ, মামুন আকন্দ, আবু ওয়াহেদ সোহেল সরকার, আবু হাসেম,দুলাল শেখ সহ বেশ আরো কয়েকজন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি( চাতাল )চালকল রয়েছে। এরমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে শুধু মাত্র ২ টির। বাকি চাতালগুলো অবৈধভাবে চলছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গোপন লেনদেন প্রক্রিয়ায় । এতে করে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক অঞ্চলে স্থাপনের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি অধিকাংশ চাতালের মিল এখানেও অনুসন্ধানী সংবাদ কর্মীরা খুঁজে পায় নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র । পরিবেশের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়াই "যেন কোন নিয়ম নীতির টাইম নাই" দাপটের সঙ্গে চলছে এসব চালকল চাতালের ব্যবসা । এ সকল চাতাল গুলো কোন ধরনের পরিবেশের নিয়মনীতি মেনে স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে কারখানার গরম পানি, ছাই ও দূষিত বর্জ্যে আবাদি জমি ও নদী দূষণ হচ্ছে । এসব দূষিত বর্জ্য ফসলি জমিতে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এই এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে লক্ষ করা গিয়েছে যেনো এরা সবাই এসব চাতালের মিলের মালিক পক্ষের কাছে জিম্মি । এসব অবৈধ চাতাল অটোরাইস মিল পরিচালনায় ম্যানেজার লেভেলে অবস্থান করা ব্যক্তিটিও হয় ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনী টিম রাখতে হবে অন পেমেন্ট পদ্ধতি কেউ যেনো মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে এটাই স্বাভাবিক। মৃত কায়ছার আলী সরকারের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সহ প্রভাবশালী ১৫ জন একত্র হয়ে অনুমতি ছাড়াই বিসমিল্লাহ অটো রাইস মিল নামে একটি বড় মিল তৈরি করছে । গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে চোখে পড়ে রিয়া অটোরাইস মিলটিও। চাতালটির চারপাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। চালকলের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, শ্রমিকরা কাজ করছেন। শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার কোন ধরনের সেফটি নেই তাঁদের মুখমন্ডলে কালো ছাইয়ের আস্তর পড়ে আছে। চাতালটিতে নেই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা তাই চাতালের সব বর্জ্য ফেলাহচ্ছে পাশের ফসলি জমি গুলোতে। চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে তুষের ছাই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ গত হুমকির মুখে পড়ছে অত্র এলাকাটি । চান্দাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা হাসান সরকার (৫০) বলেন, মিলের কাছাকাছি ১০ মিনিট দাঁড়ানো যায় না। ছাই উড়তে থাকে পুরো এলাকায়। গাছপালার সবুজ পাতা কালো হয়ে গেছে। গাছে নতুন করে কোনো ফল ধরে না এসব বিষক্রিয়ার কারনে । এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে ভুগছে। বিসমিল্লাহ মিলের ছাই উড়ে আমাদের খাবারের ভিতরে পড়ে সেই খাবার নষ্ট হয়। কিন্তু একই এলাকায় আরেকটি বিসমিল্লাহ নামে বড় অটো রাইস মিল তৈরী হচ্ছে। এই মিলটি চালু হলে এলাকায় বসবাস করাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একই গ্রামের মৃত কামাল শেখের ছাড়া ওই মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না। তবে এক মিলের লাইন কৌশলে মালিক পক্ষ যদি অন্য মিলে নিতে চাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কণা মন্ডল জানান, ওই রাইস মিলের ব্যাপারে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে। এ সমস্যা দূর করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত মিলটি চালু করা যাবে না।