সিলেট সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য আসে অহরহ। বর্তমান সময়ে চোরাচালানে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে চোরাই পথে আসা চিনি।
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে চিনির চালান। সাম্প্রতিক সময়ে চিনি কাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে চিনির চালান জব্দ করছে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না চোরাচালান। জব্দ করা চিনি পরে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় কৌশলে।
বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) সকালে জালালাবাদ থানাধীন উমাইয়াগাঁও এলাকা থেকে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় চিনির চালান জব্দ করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ।
সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ১৪টি ট্রাক বোঝাই করা অবৈধ চিনির চালান জব্দ করা হয়েছে। অভিযানকালে চোরাই চালানের প্রটোকলে থাকা মহানগর যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রুপমের একটি প্রাইভেট কার জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়া যুবলীগ নেতা শাকিলের একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করেছে পুলিশ। তারা উভয়ে মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তির অনুসারী বলে জানায় দলীয় সূত্র। তবে চোরাকারবারিদের কাউকে আটক করা যায়নি।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৪টি ট্রাক ভর্তি ভারতীয় চিনির চালান জব্দ করা হয়েছে।
সিলেটে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। চোরাচালানে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে যেহেতু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের নাম্বার পাওয়া গেছে এবং ট্রাকগুলো ছাড়িয়ে নিতে মালিকরা আবেদন করবেন, তাই তাদের শনাক্ত করা সহজ হবে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে।
এদিকে, সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) শাহপরাণ (রহঃ) থানা পুলিশের অভিযানে একটি ট্রাকে ১৩ হাজার ৭২০ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া সুরমা গেইট এলাকা থেকে চিনির চালানটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় রিয়াজ উদ্দিন (৪০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের দলপাড়া গ্রামের মুজিবুর রহমান লুদাই মিয়ার ছেলে। জব্দ করা চিনির দাম ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক রিয়াজ উদ্দিনের নামে শাহপরাণ (রহঃ) থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে বিক্রি হওয়া চিনির প্রায় ৪০ শতাংশের অবৈধ পথে আসছে। ফলে বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিশেষ করে সিলেট সীমান্তে চোরাই পথে এসব চিনির চালান দেশে প্রবেশ করছে। আমদানিকারকদের দাবি, যে হারে চোরাই চিনি দেশে ঢুকছে, তাতে আগামীতে বছরে সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে পারে।
জানা গেছে, ভারতীয় চোরাই চিনির প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা রুপি। যেখানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির পাইকারি দাম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। কম দামে এসব নিম্নমানের চিনি বেশি দামে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্ররা। যদিও সীমান্তে চোরাই চিনি চালান জব্দ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনির কারণে সরকার প্রতি কেজি চিনিতে ৩৮ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।