নগর সংবাদ।।ইতিহাসের মহামানব শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন।
পশ্চিম পাকিস্তানের প্রহসন থেকে বাঙ্গালী জাতিকে রক্ষা করতে তিনিই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় লাভের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।
ইতিহাসের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি ক্ষণ আজ নতুন প্রজন্ম সহ সকলেই জানে। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা তিনি।
মহান ভাষা ও আন্দোলন থেকে মহত্তর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাবিধ্বস্ত দেশ গঠনে তার ঐতিহাসিক অবদান পরম শ্রদ্ধায় সকলেই স্মরণ করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের গৌরবময় এই ইতিহাস সৃষ্টি করতে যে নেতা তাকে যৌবনে ১৩টি মূল্যবান বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন, কারাগারের অন্ধকার প্রকোন্ঠে বসে যে নেতা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলার ছবি হৃদয় দিয়ে একেছেন তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু।
ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩ তারিখ ১৯৬৯ সালে বাংলার দুঃখী মানুষের বন্ধু, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতাকে জাতির পক্ষ থেকে কৃতকচিত্তে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯- এর গণ অভ্যুথান, মুক্তিযুদ্ধ একেকটা আন্দোলনের একেক রকম চারিত্র বৈশিষ্ট্য ছিল। ৬৯ এর গণ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যে, তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিচারের কাজ শুরু হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকার্যে ঝুলাবার জন্য আইয়ুব খান পরিকল্পনা নিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হাসিমুখে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
কিন্তু ৬৯ এর গণ আন্দোলনের শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্নত্যাগ সেই ষাড়যান্ত্রিক প্রচেষ্টাকে সমাধিস্থ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তিনি জানতেন ৬দফা আন্দোলন না হলে ৬৯এর গণ অভ্যুথান হতো না।
৬৯ এর গণ অভ্যুথান না হলে বঙ্গবন্ধু কে কারাগার থেকে মুক্ত না হলে ৭০এর নির্বাচনে পাকিস্তানে আমরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারতাম না, তাহলে ৯মাস যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করতে পারতামনা। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র সমাজের যে ভূমিকা তা গৌররোত্তম।
শেখ মুজিবের আপোষহীন এর ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নেতৃত্ব জনগনের হৃদয়ে অমর স্থান করে নেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫আগষ্ট তিনি স্বপরিবারে সেনাবাহিনীর কিছু অসন্তুষ্ট সদস্যের হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। এই জঘন্য হত্যাকান্ডের পরেও তার কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রগতিশীল ও ধর্ম নিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ৭০,০০০ গৃহহীন পরিবার গৃহ পেয়েছে, দেশের শতভাগলোক বিদ্যা ব্যবহারের দ্বারপ্রান্তে, শিক্ষার হার ৭৪.৭%, গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭২.৬ বছরে, মাথা পিছু আয় ২,০৬৪ ডলার, অনেক মেগা প্রজেক্ট আজ বাস্তবায়নের পথে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে, এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে, বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। এসবই সম্ভবপর হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে শেখ হাসিনার সবল সমর্থ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
গত এক দশক ধরে শেখ হাসিনার বিশ্বাসযোগ্য ও বুদ্ধিমান নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যতিক্রমিভাবে দুর্দান্ত সফলতা অর্জন করেছে, ফলস্বরূপ বিভিন্নখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাকী মেয়াদে সরকারের উচিত শাসন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকে উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের একার পক্ষে সকল বিষয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি জনগনের দায়িত্ব হল দেশের উন্নতির জন্য সরকারকে সহায়তা করা।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হওয়া সত্ত্বেও বহুকাল বহিবির্শ্বে ছিল উপেক্ষিত ও আলোচিত দেশ। বাংলাদেশের কথা উঠলেই “বটমলেস বাস্কেটের” তুলনা টানা হতো। শেখ হাসিনা সরকার দেশের এই দুর্নামটি শুধু দুর করেননি, তার অর্থনীতির উন্নয়নের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে সমালোচক দেশগুলোর প্রশংসা অর্জন করেছে, বিশ্ব ব্যাংক ও এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে। বাংলাদেশ এখন বহির্বিশ্বে একটি আলোচিত দেশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনীতিতে এ দেশটির গুরুত্ব এখন স্বীকৃত। শিক্ষা, কৃষি, ক্রীড়া ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি ঘটেছে চিরকালের খাদ্য ঘাটতির দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তর করা হয়েছিল। সম্প্রতি বন্যা, খরা এবং বৈশ্বিক নানা কারনে খাদ্য উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে।
চাল, পেয়াজ ইত্যাদির দাম হঠাৎ প্রচুর বেড়ে গেছে, বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এ সংকট সাময়িক সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের উন্নয়ণের ধারাটি-কে একটু শ্লথ করে দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর সহস্রা গুরুতরে চাপ সৃষ্টি করলেও সরকার তা সাহসের সংগে মোকাবেলা করেছে। অতীতে বিডিআর বিদ্রোহ ও পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সৃষ্ট সংকটের সময়েও শেখ হাসিনা সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তার মোকাবেলা করেছেন।
হাসিনা সরকার দেশের রাজনৈতিক সন্ত্রাসমুক্ত করেছে। মৌলবাদী হিংস্রতা দমন করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একই সংগে ভারত, চীন, আমেরিকা, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের সংগে মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশ তাকে একটি সম্মানজনক স্থান করে নিয়েছে।
তাই বলে এ সরকারের কোনো ব্যর্থতা ও অসফলতা নেই তা বলব না, দেশের সব ধরনের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় শত্রু দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এক শ্রেনীর নব্যধনী দেশের শিল্প, শিক্ষা, ব্যবসা-বানিজ্য, সাংবাদিকতা-তে ও অশুভ প্রভাব বিস্তার করেছে।
দূর্নীতি দমন, সাম্প্রদায়িতার মূলোচ্ছেদ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান হাসিনা সরকার তাদের সব আন্তরিকতা সত্বেও সফল হয়নি। এক শ্রেনীর লুটেরা ও স্বার্থন্বেষী ক্ষমতাশীল ব্যক্তীত্বগণ এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ব্যাপক। তাদের লোলুপ দৃষ্টিভংগ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব না।