গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ বলছে, স্ত্রীর মোবাইলে কথা বলা নিয়ে স্বামীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদ করায় স্ত্রী কর্তৃক মারধরের শিকার হন স্বামী। প্রতিশোধ নিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি।
শনিবার (২৭ মে) সকালে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এসব তথ্য জানান। গত ২৫ মে বিকেলে টঙ্গীর পূর্ব থানার আরিচপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার মো. মাসুদ রানা (৩৭) নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার উত্তর রাজাপুর গ্রামের মো. ফিরোজ সাকিদারের ছেলে। তার স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৩৪) নওগাঁর মহাদেবপুর থানার বামনসাতা গ্রামের আয় বাবুর মেয়ে। তারা দুজনই গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার দেওয়ালিয়াবাড়ী কলেজ গেইট এলাকায় মিজানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বুলবুলি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন ও মাসুদ রিকশা চালাতেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন জানান, সাত বছর আগে মাসুদ ও বুলবুলির বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে থাকতো। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকালে কারখানায় না গিয়ে বাসায় ছিলেন বুলবুলি ও মাসুদ। রাত সাড়ে ৯টায় মাসুদ রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যাওয়ার পর বুলবুলির বড় বোন আছিয়া আক্তার টপিকে মোবাইল ফোনে বুলবুলির খারাপ কিছুর সংবাদ দিয়ে দ্রুত তাদের রুমে যেতে বলেন। আছিয়া রুমে গিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুমের দরজা ভেঙে মেঝেতে ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরদিন ভিকটিম বুলবুলির ছোট ভাই কোনাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও জানান, রিকশাচালক মাসুদ প্রথমে মোছা. শাবানা নামের এক নারীকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। শ্বশুরবাড়িতে বসবাসের সুবাদে তার সমন্ধীর স্ত্রী বুলবুলি বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সাত বছর আগে বুলবুলিকে ভাগিয়ে বিয়ে করায় প্রথম স্ত্রী মোছা. শাবানা তাকে তালাক দিয়ে চলে যান।
স্ত্রী বুলবুলি প্রায়ই মোবাইলে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলায় পরকীয়া সন্দেহ তৈরি হয় এবং ঝগড়া হতো। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর কাজ শেষে রাতে বাসায় ফিরে আসলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং স্ত্রী বুলবুলি মাসুদকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। মাসুদ অপমান সহ্য করতে না পেরে ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় কোনাবড়ির ভাড়াবাড়িতে বুলবুলির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর দরজায় তালা দিয়ে চলে যান।
এ বিষয়ে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, মূলত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরকীয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। আসামি মাসুদ রানা আদালতে বুলবুলি বেগম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।