হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা। তিনি আল্লাহকে খুব বেশি ভয় করতেন। আল্লাহর ভয়ে খেলাফতের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। কেমন ছিল আল্লাহর প্রতি তাঁর ভয়?
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা। তিনি সব সময় আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলতেন। তাঁর জীবনের সব কাজের পেছনে একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল- পরকালীন মুক্তি, সাফল্য ও কল্যাণ পাওয়া।
তাঁর অন্তরে আল্লাহর ভয় এত প্রবল ছিল যে, আল্লাহকে ভয় করার ক্ষেত্রে যেকোনো মুসলিমের জন্য উজ্জ্বলতম আদর্শ ছিলেন তিনি। চাই সে শাসক হোক কিংবা শাসিত, সেনাপতি হোক কিংবা সৈনিক। আল্লাহকে ভয় করা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবনু সিরিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘এমন কেউ ছিলেন না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর চেয়ে বেশি আল্লাহকে নিজের ইলম অনুযায়ী ভয় করতেন।’
যদিও তিনি খেলাফতের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি প্রায়ই বলতেন, কেউ যদি দয়া করে আমাকে এ দায়িত্বের বোঝা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতো, তবে আমি খুবই আনন্দিত হতাম। দায়িত্বপূর্ণ কাজকে তিনি শুধু এজন্যই ভয় করতেন যে, পেছনে তার দ্বারা এমন কোনো কাজ সংঘটিত হবে, যা আল্লাহর ইচ্ছার পরিপন্থি ও জাতির জন্য অকল্যাণকর হয়ে যায়।
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহকে খুব বেশি ভয় করতেন। বিশেষ করে কোরআন তেলাওয়াতের সময় বেশি বেশি কাঁদতেন। এ জন্য তিনি নিজেও বলতেন, তোমরা কাঁদো। যদি কান্না না-ও আসে, তবু কান্নার ভান করো।’
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় কোরআনুল কারিমের এ আয়াত নাজিল হয়-
مَنۡ یَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا یُّجۡزَ بِهٖ ۙ وَ لَا یَجِدۡ لَهٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیۡرًا
‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করবে, তাকে তার কাজের প্রতিফল দেওয়া হবে। আর সে আল্লাহর মোকাবিলায় কাউকেই নিজের বন্ধু ও সাহায্যকারী রূপে পাবে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১২৩)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াতটি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তেলাওয়াত করে শোনালেন। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!এ আয়াতটি শুনে আমার মনে হচ্ছে যে, আমার মেরুদণ্ডই ভেঙে গেছে। আমি তো লুটিয়ে পড়েছি। আমার বাবা-মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক! আমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে কোনো মন্দ কাজ করেনি? আর আমাদের সবাইকেই আমাদের মন্দ কাজের প্রতিফল দেওয়া হবে।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু বকর! তুমি ও তোমাদের ঈমানদার ভাইয়েরা দুনিয়াতেই মন্দ কাজের প্রতিফল ভোগ করবে। তোমরা যখন আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তোমাদের কোনো গুনাহই থাকবে না। আবার অন্য লোকদের অবস্থা এমন হবে যে, তাদের সব গুনাহই পুঞ্জীভূত করে রাখা হবে এবং কেয়ামতের দিন তাদেরকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে। (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহর ভয়ে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অনুভূতি ছিলো এমন- একবার তিনি একটি পাখিকে গাছের ডালের ওপর বসা দেখে বলেছিলেন, হে পাখি! তুমি কতই-না সৌভাগ্যবান। আল্লাহর কসম, আমি যদি তোমার মতো হতাম! তুমি গাছের ওপর বসো, ফল খাও, তারপর যেখানে ইচ্ছা উড়ে যাও। তোমার কোনো হিসেব নেই, আজাবও নেই। হায়, আমি যদি রাস্তার ধারের একটি গাছ হতাম, সেখান দিয়ে একটি উট আসত, আমাকে মুখে নিয়ে চিবাতো, হজম করত, অতঃপর বিষ্ঠা হিসেবে বের করে ফেলে দিত, হায়, আমি যদি মানুষ না হতাম!
আল্লাহর ভয় অনেক দামি মর্যাদা। মুমিন যদি আল্লাহকে ভয়ই করতে পারে তবে দুনিয়া ও পরকালের সাফল্য শুধু তার-ই জন্য। তাই আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার বিকল্প নেই। এ কারণেই মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমের বহু আয়াতে তাঁকে বেশি বেশি ভয় করার কথা বলেছেন। আল্লাহকে ভয় করতে পারলেই মিলবে মুক্তি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁকে ভয় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে হজরত আবু বকরের মতো আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।