নগর সংবাদ।। হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরমের সঙ্গে বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আক্রান্তের হার রাজধানী এবং এর আশেপাশের জেলাতেই বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত সাত দিনে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন রেকর্ড সংখ্যক রোগী। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আইসিডিডিআরবি’তে।
আইসিডিডিআরবির চিকিৎসকরা বলছেন, ভর্তি রোগীর ২৩ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত। ডায়রিয়ায় আক্রান্তের মধ্যে সিভিয়ার রোগীও রয়েছেন।
আইসিডিডিআরবি পক্ষ থেকে জানা যায়, সারা বছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যায়। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বাহারুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, রোগীদের ৩০ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত। বেশিরভাগ রোগীই বয়স্ক। ডায়রিয়া থেকে নিরাপদে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি রাস্তার পাশের খাবার খাওয়া বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডায়রিয়া, বাচ্চাদের নিউমোনিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। এর প্রধান দুটি কারণের একটি হচ্ছে বায়ু দূষণ। আমরা জানি বাংলাদেশ বায়ু দূষণের পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষে অবস্থান করছে। বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ এবং বাচ্চাদের নিউমোনিয়া বেড়ে যাচ্ছে। দূষিত বায়ু যখন খোলা খাবারের সংস্পর্শে আসে, তখন খাবারেও দূষণ যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে ডায়রিয়া রোগ বাড়ছে।
আমরা অনেক বছর যাবত, ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে নিরাপদ খাবার পানির কথা বলে আসলেও, সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি। ফলে এই অনিরাপদ পানি থেকেও ডাইরিয়া হচ্ছে। এই দুটি কারণেই ডায়রিয়া এবং বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগ বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যেসব মেগা প্রকল্প চলছে, তাতে পরিবেশ রক্ষায় যেসব বিষয় মানা উচিৎ সেগুলো একদমই মানা হচ্ছে না। অপরদিকে পরিবেশের মান রক্ষায় হাইকোর্ট যে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তারও কোনটা মানা হচ্ছে না। যার ফলশ্রুতিতে ডায়রিয়া, বাচ্চাদের নিউমোনিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ বাড়ছে।
ডা. লেনিন বলেন, বায়ু দূষণ মুক্ত করার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশিত ১১ দফা বাস্তবায়ন, পরিবেশ দূষণ রোধে বিজ্ঞানসম্মত উপায় গ্রহণ এবং সুপেয় নিরাপদ খাবার পানি যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ডায়রিরা, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।