অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ (হবিগঞ্জ জেলা) নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিককার কথা। নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সুতা বাণিজ্যের গদি সামলাতেন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম সোলায়মান। একদিন খুব ভোরে টানবাজারে গিয়ে দেখেন গদিতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন একজন সুতার এজেন্ট। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুতা সরবরাহের কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলে প্রায়ই এভাবে ঘুমাতেন তিনি। সেই ব্যক্তি এখন দেশের সর্ববৃহৎ সুতা উৎপাদনকারী কারখানার প্রধান হিসেবে বনে গেছে । শূন্য থেকে বড় উত্থানের এ গল্প বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বাদশা মিয়ার। টানবাজারে সুতার গদি থেকেই ব্যবসার শুরু তার। ছিলেন স্পিনিং মিলের এজেন্ট। সাধারণত স্পিনিং মিলের সঙ্গে বার্ষিক, দ্বিবার্ষিক বা ত্রিবার্ষিক চুক্তি করতেন। চুক্তি মোতাবেক স্পিনিং মিলের উৎপাদিত সুতা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুতার ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করতেন। সেই সুতার গদি থেকেই এখন তিনি টেক্সটাইল খাতের ‘বাদশাহ’। মাদারীপুর জেলার শিবচরের পাঁচচর ইউনিয়নে জন্ম মোঃ বাদশা মিয়ার। শিবচরে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই তাঁত ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। সেই সূত্রে ১৯৭৬ সালের দিকে জীবিকার তাগিদে নারায়ণগঞ্জে আসেন বাদশা মিয়া। ১৯৭৭ সালে সুতার পাইকারি বাণিজ্য শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ঐতিহ্যগত সুতার গদির মালিক হন। সুতার বাণিজ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও শিল্প গড়ে তুলতে গিয়ে প্রথমে স্থাপন করেন রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। ২০০০ সালে গড়ে তোলেন পাইওনিয়ার সোয়েটার লিমিটেড। এরপর ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় একে একে স্থাপন করেন বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড এবং কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড। আর অন্য দিকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হরিতলা এলাকায় পাইওনিয়ার ডেনিম কোম্পানি করার নামে অবৈধ ভাবে গরীব ও অসহায়দের জমি টাকার বিনিময়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের নামে ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা করে নেওয়াসহ অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে কোম্পানির উৎপাদন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায় পাইওনিয়ার ডেনিম (বাদশা কোম্পানি) এর মালিক বাদশা মিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার জন্য হরিতলা এলাকায় স্হান নির্ধারণ করে জমি কিনে ভিত্তি স্হাপন করে। কিন্তু বাদশা মিয়ার পছন্দের জমি এলাকার গরীব ও অসহায় জনগণ তাদের সামান্য সম্বল টুকু হাতছাড়া করতে রাজি না হওয়ায় টাকার জোরে এবং প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তাকে (সেটেল মেন্ড অফিসার) কে বাগে নিয়ে নিজের নামে রেকর্ড ভুক্ত করে নেয়। এতে সহযোগিতা করে দলিল লিখক সালাহউদ্দিন। স্হানীয়রা জানান, ভূমি জরিপের সময় প্রাথমিক হাতপর্চা জমির মালিকদের নামে দিলেও ফাইনাল প্রিন্ট পৰ্চা আসে জনৈক বাদশা মিয়ার নামে অথবা বাদশা মিয়ার নিজস্ব লোকদের নামে । এলাকাবাসীর অভিযোগ স্হানীয় দলিল লেখক সালাহউদ্দিন নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বাদশা মিয়াকে তার পছন্দের জমি পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড এর নামে রেকর্ডভুক্ত করার শর্ত সাপেক্ষে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় বাদশা মিয়া নিজের টাকা খরচ করে দালাল সালাউদ্দিনকে দলিল লিখার লাইসেন্স করে দেন। বলে জানিয়েছেন স্হানীয়রা। পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড এর হরিতলা মৌজায় নতুন উত্তর প্রজেক্ট এলাকায় ভুমিহীন দের বন্ধোবস্ত কৃত (সরকারি) ভূমি দলিল করে দেওয়ার আগেই নিজ নামে (পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড) বি.এস.ফাইনাল পর্চা করার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাছাড়া দালাল হাতেমের মাধ্যমে ভূমিহীন দের জিম্মি করে নামমাত্র মূল্যে দলিল নেওয়া, অপর দিকে এইচ আর এডমিন হাসান মিয়ার মাধ্যমে অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেওয়ার কাজ হাসিল করে আসছেন। স্হানীয় অনেক জমির মালিকের কাছ থেকে দলিল না নিয়ে বি, এস.ফাইলাল পৰ্চা নিজ নামে করানোর অভিযোগও রয়েছে অহরহ। পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড এর বাদশা মিয়ার পালিত দালাল সালাউদ্দিন শুধু এলাকার জনগণকে ঠকিয়ে কান্ত হননি। তিনি দলিল সম্পাদন করার সময় দলিলে কম মুল্য দেখিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রমান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের সহ তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বলে স্হানীয় সাবরেজিস্টার অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন । বাদশা কোম্পানি'র ভেতর ও বাহিরে বেশ কিছু ভয়ংকর প্রকৃতির লোকের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্মে কার্যকলাপ। এই বিষয়ে বাদশা মিয়ার মোবাইল নাম্বারে বার বার যোগাযোগ করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে এইচ আর এডমিন হাসান মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি, রং নাম্বার বলে ফোন কেটে দেন। পরে অনেক বার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর হাতেমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার সামনে অনেক লোক বসা আমি এই বিষয় কোন কথা বলতে পারব না বলে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে অনেক বার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এই ধারাবাহিকতায় আমরা কয়েকটি পর্বে তুলে ধরবো অপরাধ দূর্নীতির চলমান হালচাল। আসছে জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক এ অদ্যোপান্ত , চোখ রাখুন সাথেই থাকুন।