হবিগঞ্জের সালাউদ্দিনের দূর্নীতির হালচাল-১০ বছরে অঢেল অর্থ বিত্ত ও ভূ-সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন
মাধবপুর, হবিগঞ্জ থেকে ফিরে.. মাহবুব আলম:
সালাউদ্দিনের দূর্নীতির হালচাল দূর্নীতির খতিয়ান - হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার খড়কি গ্রামের আবু তাহের মিয়ার পুত্র সালাউদ্দিন বিগত ১০ বছরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি শুধু নিজেই দেননি বরং সঙ্গে এসব দলিল রেজিস্ট্রিতে করেছেন সীমাহীন দুর্নীতি, করেছেন নিজের পকেট ভারী আর গড়েছেন অবৈধ পথে অর্জিত সম্পদের পাহাড় । রাস্তার পাশে এক পান দোকানদারকে সালাউদ্দিন এর কথা জিজ্ঞেস করতেই " বাইছাব সালাউদ্দিন এর কথা আর কিতা কৈতাম রে...বা...ইগু তো বাটপার , গোটা এলাকার বহু লোকজনরে পথে বসাইলাইছে, " এমনও তথ্য পাওয়া গেছে এই সালাউদ্দিনের নামে বেনামে রেষ্টরী অফিসের দালাল সিন্ডিক্যাট তারা মাষ্টারমাইন্ড ।
তার সাক্ষরিত বহু প্রমানিত তিনি নিজের অজান্তে রেখে গেছেন এসব বানোয়াট দলিলপত্রে । অবৈধ অর্থ সম্পদ আত্মস্মাত একটা নেশায় পরিনত হয়ে গেছে একটা সময় এই সালাউদ্দিনের । বর্তমানে এলাকায় নিজেকে জাহির করেছেন বিরাট ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে, গড়েছেন দৃষ্টি নন্দন বাড়ী দোকান পাট জমিজমা । দুই নাম্বার কোন ধরনের কাজ আসলেই ডাক পড়ে সালাউদ্দিন এর । কারন তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নামে বেনামে ক্রয় করছেন কোটি কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি । সরেজমিনে অনুসন্ধানি সংবাদকর্মীদের টিম খুঁজে পায় রাজস্ব ফাঁকির নানান প্রমান । সরল বিশ্বাসে আসা অসহায় লোকদের জমি বিক্রির কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত এসব তথ্য উপাত্ত । ২০১২ সালে ১০৭ নম্বর সনদে চারাভাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখার অনুমোতি পেয়ে সরকারি রাজস্বের উৎস কর, স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন ফি আত্মসাৎ করা শুরু করেন তিনি এমনও তথ্য রয়েছে তিনি দুই নাম্বার স্টাম্প জালিয়াতি ও করছেন । শুধু রাজস্ব আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি মাদরাসায় পড়াশোনা করা এই সালাহউদ্দিন, রপ্ত করেছেন জমির মৌজা, শ্রেণি পরিবর্তন, অল্প ফি’তে হেবা কিংবা আম মোক্তার নামা দলিল হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে শিরোনাম পরিবর্তন করে সাফ কবলাতে রুপান্তর সহ স্বাক্ষর জালিয়াতি , স্ট্যাম্প জাল জালিয়াতি আরো নানা অপরাধ অপকর্মে ।
অসহায় নিরীহ লোকদের জমি বিক্রির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এসবের মাধ্যমে দলিল লেখক সালাহ উদ্দিন গত ১০ বছরে অঢেল অর্থ বিত্ত ও ভূ-সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন । বিঃদ্রঃ ৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর অফ রেজিস্ট্রেশন অফিস (আইআরও)খন্দকার হুমায়ূন কবির স্বাক্ষরিত স্মারকে দলিল লেখক সালাহ উদ্দিনের কাছ থেকে সরকারি ঘাটতি রাজস্ব আদায় করে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রুজু করা হয় এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের আঙিনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য বলা হয়েছিল। সালাউদ্দিন এর এহেন কর্মকান্ডে যিনি মুখ খুললেন তাকে মামলার বাটে পড়তে হয়েছে তেমনি এক ভূক্তভূগী " জালাল " হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে, দ্রুত বিচার আইনে মামলাসহ ৪টি মিথ্যা মামলায় ১২২ দিন কারাবাস করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী জামাল মিয়ার। সালাহউদ্দিন ও তার সহযোগিদের হুমকিতে অভিযোগকারী জামাল ও পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন । অন্যদিকে উৎসকর ৬১ হাজার ৮শ’ ৪০ এবং স্থানীয় সরকার কর বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ ২০ টাকাসহ মোট রাজস্ব ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ ৬০টাকা ৭ কার্য দিবসের মধ্যে চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করার নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে এতে কর্ণপাত পর্যন্ত করেননি এই সালাহউদ্দিন। বিভিন্ন তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণিত হলেও সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু তো দূরের কথা একটি আদেশও বাস্তবায়ন হয়নি বরং উল্টো সালাউদ্দিন হবিগঞ্জ আদালতে সাব রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত খারিজ করে দেয়।
সালাহ উদ্দিনের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তার প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে কথা বললে ফেঁসে যেতে হয় মিথ্যা মামলায়, শিকার হতে হয় হামলারও। এমনই এক ভূক্তভোগী উপজেলার "আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন"। গত বছরের জুন মাসে দলিল বাঘাসুরা ইউনিয়নের শিবজয় নগর গ্রামের মৃত আছিব নামে রেকর্ডিয় ৪৫ শতক ভূমি জাল কাগজে ৭৩৪৯ নম্বর লেখক সালাহ উদ্দিন ভুয়া দাতা সাজিয়ে তার স্বামীর আমমোক্তার দলিল সৃজন করে অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ দাখিল করেছেন সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে । একই ইউনিয়নের হরিতলা গ্রামের সামসু মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া (৩৮)। ১৯৭ শতক পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির ৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকাসহ সরকারের রাজস্ব ৭৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করায় সালাউদ্দিনের ইশারায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০১৪ সালের গত ২৮ জুলাই জামাল মিয়া মাধবপুর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রি করেন। শুধু জামালই নয়, প্রতারক সালাউদ্দিনের খপ্পরে পড়ে চলতি বছরের ২৭ মে হরিতলা গ্রামের বিধবা নুর জাহান বেগম তার ২৫৮শতক ভূমি বিক্রির ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। এ ঘটনায় নুরজাহান বেগম সালাউদ্দিনের অফিস কক্ষে সশস্ত্র সহযোগিদের নিয়ে জোর পূর্বক ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনে হবিগঞ্জ আদালতে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে সি আর মামলা দায়ের করলে আদালতের নির্দেশে মাধবপুর থানায়। গত ১৫ জুন জি আর মামলা হিসেবে রুজু হয়ে তদন্তাধীন আছে। শুধু রহিমা, জামাল কিংবা নুরজাহান নয় সালাহ উদ্দিনের জাল জালিয়াতিতে পথে বসা আরও শতাধিক ভূক্তভোগী পাওয়া যাবে অত্র অঞ্চলে। ২০১২ সাল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সালাহ উদ্দিনের লিখিত দলিলগুলো তদন্ত করলে সরকারের কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে ভূক্তভূগী অভিযোগকারীদের দাবি। মুঠোফোন সালাহ উদ্দিনের কথা হলে তিনি বলেন, স্টার সিরামিক্স, আকিজ গ্রুপ ও ব্যক্তি বিশেষের দলিল ব্যতিত শুধু "বাদশা কোম্পানীর প্রায় ৩শ ৪৭ কোটি টাকার দলিল সম্পাদন করেছি" । জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে আমাকে হয়রানি করার জন্য ঘাটতি রাজস্ব আদায়ের নোটিশ করার কারণে টাকাগুলো জমা দেইনি।