ঘটা করে শুধু ১৪ ডিসেম্বর নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সারাবছর কথা হোক—এমনটি চান শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়। তিনি বলেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদান, তাদের আত্মত্যাগ, নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুধু ১৪ ডিসেম্বরই কথা বলতে চাই না। সারাবছর আমরা কথা বলতে চাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই, তুলে ধরতে চাই। আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে কাজ রেখে গেছেন, সেটিকে সংরক্ষণ এবং ডিজিটাল ডকুমেন্টেশনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। তাদের কাজ নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হওয়া দরকার। পাঠ্যসূচিতে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে পাঠ থাকাও আবশ্যক। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘রক্তঋণ’ শীর্ষক স্মরণসভায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, বাঙালির মূল স্রোত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ধারণ করে এবং হত্যাকারীদের প্রত্যাখ্যান করে। আমি মনে করি, কোনো হত্যাকারীর সন্তান পিতার আত্মপরিচয়ে গর্বিত হতে পারে না। বরং ঘৃণা এবং ক্ষুব্ধ থাকার কথা। অন্যদিকে শহীদ পরিবারের যারা সন্তান, তারা আমাদের গৌরব, ভালোবাসা, প্রীতি ও আলিঙ্গন। তারা সবকিছুর মধ্যে বছরজুড়ে থাকেন। আমরা শহীদদের স্মরণ করি এ কারণে যেন এরমধ্যে সত্য অনুসন্ধান করতে পারি। নিজেদের শাণিত করতে পারি। স্মরণসভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানরা সেই সময়ের নির্মম ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়া দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক, কবি, সাহিত্যিকরা ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
স্মরণসভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান আহমেদ মুনীর ভাষণ, শহীদ কাজী শামসুল হকের সন্তান কাজী সাইফুদ্দীন আব্বাস, শহীদ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সন্তান আলী মোর্তুজা। অনুষ্ঠানে শহীদ স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন ও বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নুরুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিস্টিঙ্গুইসড প্রফেসর ড. এ কে এম নুর-উন-নবী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শ্যামা রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাস সিংহ রায়, সরকারি সংগীত কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্টি হেফাজ প্রমুখ। গান পরিবেশনের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে স্মৃতিস্মরণ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। স্মৃতিচারণ শেষে সন্ধ্যায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আগত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।