করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে ২০২১ সালে পুলিশ সপ্তাহ হয়নি। গত বছরের অনুষ্ঠানে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৩ সালের পুলিশ সপ্তাহ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ৩-৮ জানুয়ারি। এবার প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে না বলে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী সবশেষ ২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। ২০২২ সালে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকায় সরাসরি দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করতে পারেননি পুলিশ সদস্যরা। এবারও সেই অবস্থানেই থাকছেন তারা।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উদ্বোধন করবেন। পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন বর্ণিল প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করবেন। পরে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে দেবেন দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ প্যারেডেও অংশ নেবেন। এরপর ২০২২ সালে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট ১১৫ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হবে। নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আগামী ৮ জানুয়ারি শেষ হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ।
পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দাবি-দাওয়া তুলে ধরার কথা থাকলেও এবার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দাবি তুলছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুলিশ কর্মকর্তাদের যে দাবি-দাওয়া তুলে ধরার কথা ছিল তা এরই মধ্যে বেশকিছু বাস্তবায়ন হয়েছে।
এরই মধ্যে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ৪ জানুয়ারি সকালে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠান হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে। একই দিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ উপলক্ষে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
পুলিশ সপ্তাহের তৃতীয় দিন অন্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নেবেন। ৬ জানুয়ারি আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পরদিন আইজিপি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নেবেন। এদিন পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি, পুলিশ অফিসার্স মেস ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিন ৮ জানুয়ারি সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সঙ্গে, বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে ও সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এবারের বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন খুলনা রেঞ্জের পুলিশ সুপার কাজী মইন উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেবেন। পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে।
‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’ উদযাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান বলেন, পুলিশ সপ্তাহের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠ। পুলিশের সব ইউনিট নিয়ে প্যারেড হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন।
তিনি বলেন, পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত পুলিশ সপ্তাহ পাঁচদিন হয়। সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) দেওয়া হবে।
এছাড়া থাকবে একাধিক দরবার, আলোচনা, মতবিনিময়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভাসহ নানান আয়োজন।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়েছিল। দাবিগুলো শুনে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের কল্যাণ প্যারেড হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দাবি-দাওয়া এবার উত্থাপন করা হবে না।
এর আগে ২০২০ ও ২০২১ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২৩০ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হয়।
এর আগে সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ২০১৯ সালে ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্য বিপিএম-পিপিএম পদক পান।
এছাড়া ২০১৮ সালে ১৮২ জন, ২০১৭ সালে ১৩২, ২০১৬ সালে ১২২, ২০১৫ সালে ৮৬ জন কর্মকর্তাকে বিপিএম-পিপিএম পদক দেওয়া হয়।
পুলিশ সপ্তাহের শেষদিন ছয়টি বিশেষ ক্যাটাগরিতে মনোনীতদের ‘আইজিপি ব্যাচ’ পুরস্কার দেবেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।