নগর সংবাদ।। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে সিলেট সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ তিনদিন পর উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের ১৩৩১ পিলার সংলগ্ন নোম্যান্স ল্যান্ড দেড়শ’ গজের মধ্য থেকে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে স্থানীয় জনিপ্রতিনিধিদের শনাক্ত মতে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর আগে বিকেল ৪টার দিকে ডোনা সীমান্তের ১৩৩০ ও ৩১ পিলারের মধ্যবর্তী নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় বিবিজি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সোহেল আহমদ এবং বিএসএফের পক্ষে ৯১ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট রাউয়াত। বৈঠক শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়। পতাকা বৈঠক ও মরদেহ ফেরত পাওয়া প্রসঙ্গে বিজিবি-১৯ ব্যাটালিয়টের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সোহেল আহমদ বলেন, দুই বাংলাদেশির মরদেহ সীমান্তে জিরো লাইনের দেড়শ’ গজের ভেতর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ছিল।
যে কারণে বিজিবি-বিএসএফকে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে গুলিতে নিহত আসকর উদ্দিন (২৫) ও আরিফ উদ্দনের (২২) মরদেহ শনাক্ত করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাদের শনাক্তমতে মরদেহ দু’টি কানাইঘাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে। তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধারে আমরা বিলম্ব করছিলাম বিএসএফের জবাব পেতে। অপরাধী হলেও তারা গুলি করে মারতে পারে না। ঘটনার পর উচ্চ পর্যায় থেকে যোগাযোগ হচ্ছিল। যে কারণে তারা পাতাকা বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছে। আমরা বিএসএফকে আমাদের অভিযোগ জানিয়েছি। তাদের প্রশ্ন করেছি- কিলিং (হত্যা) কীভাবে হয়েছে।
কিন্তু বিএসএফ বলছে দুই বাংলাদেশি হত্যা সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, বিজিবি-বিএসএফ পাতাকা বৈঠকের পর সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হবে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দু’টি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে আনার পর শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি। ফলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর আগে বুধবার (৩ নভেম্বর) সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের ১৩৩১ পিলার সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ওই দুই বাংলাদেশি নিহত হন।
নিহত আসকর উদ্দিন কানাইঘাট সীমান্তবর্তী এরালীগুল গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে। আর আরিফ উদ্দিনও একই গ্রামের আব্দুল হান্নানের। স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় লালবাজারে যান। এরপর আর বাড়িতে ফিরেনি। গত দুই দিন ধরে মরদেহ খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল। তাদের নিথর দেহ ফিরে পেতে বিলাপ করছিলেন স্বজনরা। ঘটনার পর পুলিশ জানায়, গুলিতে দুই যুবক নিহত ছাড়াও আরও দু’জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আত্মগোপনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে নিহতদের খোঁজ পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।