আজ পাঁচই এপ্রিল শুক্রবার, ঠিক বিকেল চারটায় আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার, এই দাবী নিয়ে এবং ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে, পিউপিল স রিলিফ কমিটি আয়োজিত, কলকাতা প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন ।
এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরো তিনটি সংস্থা উপস্থিত ছিলেন,এ ছাড়াও জানা যায়, আরো নটি ভিন্ন জেলার, বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতার হাত বাড়াবেন বলে জানিয়েছেন। আজকে যারা উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, এ এইচ এস ডি এসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, এবং ডাবলু বি এম এস আর ইউ ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়ন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, পিউপিলস রিলিফ কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি ডক্টর ফুয়াদ হালিম, সেক্রেটারি পিবিভিএম প্রফেসর প্রদীপ মহাপাত্র। এ এইচ এস ডি এক্স প্রেসিডেন্ট প্রফেসর অনুপ রায়, ডব্লু বি এম এস আর ইউ প্রেসিডেন্ট শুভ্রাংশু ভট্টাচারিয়া সহ অন্যান্যরা। আজ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেশ কিছু দাবী তুলে ধরেন,
যেগুলি সরকারের দৃষ্টিগোচর করা প্রতি অবশ্যই দরকার। এবং ভোটের প্রচারে সাথে সাথে এইগুলি নিয়ে যদি একটু মানুষের সামনে তুলে ধরেন তারও বর্ণনা করলেন। তাই ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আজ এই সাংবাদিক সম্মেলন। তাহারা বলেন পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এদিকে যেমন বিপর্যয়ের কারণ অন্যদিকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এবং জীবন হানী বেড়ে চলেছে। প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু কারণ হয়ে উঠেছে, ১৪০টি দেশ তাদের সংবিধানের স্বাস্থ্য কে মানুষের অধিকার বলে স্বীকৃতি দিলেও,
প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, তার যথাযথ প্রয়োগ এবং স্বাস্থ্য পরিসেবার সুযোগ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। আরেকটি বিষয় ও আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যের অধিকার এর সাথে অঙ্গাঙ্গেভাবে জড়িত অন্যান্য কয়েকটি মৌলিক অধিকার, যেমন বেঁচে থাকার অধিকার, খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাসস্থানের অধিকার ,কাজের অধিকার ,গোপনীয়তার অধিকার, তথ্যের অধিকার, সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার, আন্দোলনের অধিকার ইত্যাদি। এরমধ্যে খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, কাজের অধিকার, সংবিধানে স্বীকৃত হলেও, স্বাস্থ্যের অধিকার কিন্তু এখনো স্বীকৃতি হয়নি। তাই এবারে নির্বাচনে স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী তুলেছি। তাহারা জানান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাজেটের বরাদ্দ অর্থ খুবই কম, মাত্র একুশ শতাংশ।
সরকার তার স্বাস্থ্য নীতির লক্ষ্যমাত্রা যা নির্ধারণ করেছিল, তা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে, এই বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশ রোগ প্রতিরোধে ব্যয় হয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা প্রয়োজনে তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম, আর যেগুলি আছে তার আবার এক-তৃতীয়াংশ ২৪ ঘন্টা চালু থাকে বলে জানান।
সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৮ লক্ষের মতো, আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রয়োজন আরো ৩৫ লক্ষ সজ্জার দরকার, চিকিৎসক ও নার্স মোট সংখ্যা ও প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক, ৪৫ লক্ষের জায়গায় ২৬ লক্ষ, স্বাস্থ্য বীমা চালু করে কেন্দ্রের ও রাজ্যের সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে চাইছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের করের টাকার একটা বড় অংশ কর্পোরেট স্বাস্থ্য পরিসেবার হাতে তুলে দিয়ে তাদের মুনাফার গ্যারান্টি দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা খাঁটি ২০২৩ ২৪ এ ৭২০০ কোটি টাকার সংস্থা রাখা হয়েছিল, যার ৭৫ শতাংশ অর্থ প্রদান করা হয়েছে বেসরকারী ক্ষেত্রে। তাহারা জানান,
এই সকল অর্থ যদি সঠিকভাবে ব্যয় হতো, তাহলে স্বাস্থ্যপরিসেবার হাল অনেকটাই উন্নতি হতো। তাই তারা আজ এই সাংবাদিক সম্মেলনে যে দাবী গুলি তুলেছেন,,,, সেগুলি হল , কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে সমস্ত রকম স্বাস্থ্য পরিসেবা সকল মানুষকে বিনা খরচে দিতে হবে। ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম থেকে জিএসটি তুলে দিতে হবে।
যে সরকারি হাসপাতালগুলো এখন আছে, তাদের যথাযথ উন্নতি করতে হবে। সব হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যে কর্মসংস্থানে জায়গা বা পোস্ট খালি রয়েছে তাতে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে। সরকারি ঔষধ এবং টিকা প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোকে পুনর্জীবিত করতে হবে।
চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে জিরো পার্সেন্ট জিএসটি হতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে জিডিপির ৩.৫% স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করতে হবে, রাজ্য সরকারগুলোকে তাদের রাজ্য জিডিপি 5% স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করতে হবে। স্বাস্থ্যের জন্য এই সরকারি খরচের ৪০% প্রাইমারী বা রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য খরচ করতে হবে ,রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরো নতুন সরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করতে হবে।
যথাযথ ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার তৈরি করতে হবে, যাতে কার্যকরী ভাবে ওষুধের দাম কমানো যায়। এই সকল দাবী গুলি নিয়েই তারা আজ প্রেস কনফারেন্স করলেন, এবং তারা বিভিন্নভাবে প্রচারের আয়োজন করবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে । তারা বলেন এখনো পর্যন্ত সিপিএমও কংগ্রেস থেকে কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের দিকে, আরো সকলকে এইভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে, তাহলে হয়তো স্বাস্থ্যপরিসেবার পরিকাঠামো সুন্দরভাবে গঠন হতে পারে।