না.গঞ্জে মন্দির কমিটির নির্দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন! ১৪ পরিবারের দূর্বিষহ জীবনযাপন অবৈধ ভাবে উচ্ছেদ করতে হামলা, ভাঙচুর ও নানা ধরনের নির্মম নির্যাতন করছে- পরিতোষ কান্তি সাহা
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের নিতাইগঞ্জ কাচারি গলিতে দীর্ঘ দিনের পুরনো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয় ‘শ্রী শ্রী গোপাল জিউ আখড়া’র পাশে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে ১৪টি অসহায় নিম্নবিত্ত পরিবার। তাদেরকে অবৈধ ভাবে উচ্ছেদ করতে হামলা, ভাঙচুর ও নানা ধরনের নির্মম নির্যাতন সহ প্রায় ৫ মাস যাবত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মন্দির কমিটির সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা।
ফলে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই চৌদ্দ পরিবারের প্রায় অর্ধশত মানুষ গভীর অন্ধকারে জীবন যাপন করছেন। জানা গেছে, শ্রী শ্রী গোপাল জিউর মন্দিরের জমির মূল মালিক ছিলেন ভজরম বলি দাস। তার দেয়া ৪৭ শতাংশ জমিতে এই মন্দির গড়ে উঠে। পাইকপাড়া “ম” খন্ড মৌজা, আর এস খতিয়ান ২৯৫, দাগ নং-৩১৬। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে মন্দিরটি দেখাশোনা ও পরিচর্যা করতে মন্দিরের পরিত্যাক্ত জমিতে সেবাইত হিসেবে স্বর্গীয় লংকেস্বর এর ছেলে মহাদেব কর্মকার(৯০) সহ নিধিরাম কর্মকার, নারায়ণ কর্মকার, হরিমন্ডল, ননি মন্ডল ও সুভাস মন্ডল এসে বসতি শুরু করেন। বর্তমানে তাদেরই বংশদ্ভূত ভবতোষ, বিষ্ঞু, সঞ্জীবন, হরিদাস, গুরুদাস, বিপ্লব বিষু কর্মকার, সঞ্চয় কর্মকার, সাগর কর্মকার, লিখন মন্ডল ও সুমন মন্ডলসহ সর্বমোট ১৪ টি পরিবার বসবাস করছে।
এদিকে মন্দির কমিটির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ৯ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করছেন পরিতোষ কান্তি সাহা। তার ছোট ভাই একই কমিটির সহ সভাপতি বিপুল সাহা ও সাধারন সম্পাদক হিমাদ্রী সাহা। দীর্ঘ ৯ বছর যাবত এ কমিটির দ্বায়িত্বে থাকার কারনে সে তার মনগড়া নিয়ম নীতি ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মন্দিরের জমিতে বসবাসকারী সেবায়তরা। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার সেবায়েত পরিবারের পক্ষ থেকে কমিটির সভাপতি পরিতোষ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তারা বলেন- ‘পরিতোষ সভাপতি হবার পর থেকেই তাদেরকে এই জমি থেকে উচ্ছেদ করতে নানাভাবে অমানুষিক নির্যাতন করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী বিদ্যুৎ অফিসে সভাপতি পরিতোষের লিখিত অভিযোগের ফলে আমাদের ব্যবহৃত ৬টি বিদুৎ সংযোগ মিটার (যার হালনাগাদ বিল পরিশোধ) অবৈধ উল্লেখ করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে স্পষ্ট যে পরিতোষের রোশানলের শিকার আমরা।’ তারা আরও বলেন- ‘তার এই ঘৃণিত ও হীন মন মানসিকতার কারনে আমরা ১৪ টি পরিবার এখন বিদ্যুৎ ছাড়া প্রচন্ড গরমে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। এখানে বয়স্ক ও শিশুরা গরমে ছটফট করছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে না।
এ ঘটনার প্রায় ৫ মাস হয়ে গেলেও এ বিষয়ে তিনি কোনো সমাধান না করে বরং আমাদেরকে উল্টো হুমকিধামকি দিয়ে আসছে আমরা যেনো এ স্থান থেকে চলে যাই। আমাদের ধারনা পরিতোষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে আমাদেরকে উচ্ছেদ করে এই জমিটি তার দখলে নিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে।’ অসহায় এই পরিবারের সদস্যরা আরও বলেন- ‘আমরা সবাই স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে এই মন্দিরের জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে মন্দিরের সেবামূলক কাজ ও পূজা করে আসছি। আগে তেমন লোকজন বা কমিটি ছিলোনা। তখন আমরাই মন্দিরের পরিচর্যা করতাম।
এখন কমিটি হওয়ায় আমাদের তেমন কোনো মূল্যায়ন নেই, বরং অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে থাকতে হচ্ছে। আমাদের মনে একটিই আশা আমরা নিঃস্বার্থভাবে সবাই মন্দিরের খেদমত করে বাকি জীবনটাও এ মাটিতে কাটাতে চাই এবং শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করতে চাই। এই জমি ছাড়া আমাদের মাথা গোঁজার আর কোনো ঠাঁই নেই। আমরা অসহায় ও দরিদ্র বলে আজ আমাদের এই স্থান থেকে উচ্ছেদ করার চক্রান্ত চলছে।
আমরা ন্যায় বিচারের আশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় মেয়র মহাদয়,এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ ও আমাদের ধর্মাবলম্বী ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি
’ অপরদিকে বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়ে পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন ‘আমরা মন্দিরের উন্নয়নে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তাদের বসতির কথা চিন্তা করে নতুন ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি কিন্তু তারা সেই ঘরে না উঠে যে যেখানে রয়েছে সেখানেই থাকছে। বিদুৎ সংযোগে তাদের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত আবেদন করি, যার ফলে তারা উপযুক্ত কাগজ না দেখাতে পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আমি কোনো অনিয়ম বা অবিচার করিনি।’