কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ প্রতিনিয়ত বাড়ছিল। গরম বাড়ায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে জনজীবন। ঈদের দু-তিনদিন আগে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। ঈদের আগের দিন বিকেলে ও ঈদের দিন ঢাকায় এক পশলা বৃষ্টি নামে। এতে স্বস্তি ফেরে জনজীবন। তাপমাত্রা নামে ৩৮ ডিগ্রির নিচে।
দাবদাহ কেটে যাওয়ায় ঈদে স্বস্তির সঙ্গে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। এতে বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটিতে ঘুরতে বেরিয়েছেন তারা। শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীদের ভিড় বেশি দেখা গেছে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। রাজধানীর শ্যামলীতে শিশুমেলায় শিশুদের চেয়ে বড়দের ভিড় বেশি। এ শিশু মেলার বর্তমান নাম ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড’। ছোট পরিসরের এ বিনোদনকেন্দ্রে আয়তনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দর্শনার্থী। শিশুমেলায় প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা।
ভেতরে সব রাইডে চড়তে হলে গুনতে হবে জনপ্রতি ৫০ টাকা। এতে একটি শিশু যদি ১০টি রাইডে চড়ে, তাহলে তার জন্য প্রায় এক হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কারণ বাচ্চারা একা একা রাইডে বসতে পারে না। সঙ্গে বাবা-মা বা কাউকে থাকতে হয়। যে কারণে প্রতিটি রাইডের জন্য কমপক্ষে দুটি টিকিট দরকার হয়। তবে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না।
ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে শ্যামলী শিশুমেলায় এসেছেন আরিফুল ইসলাম ও নাঈমা হাসান। পাঁচ বছর বয়সী সন্তান রাতুল ইসলামের জন্যই তাদের শিশুমেলায় আসা। আরিফুল বলেন, আজকে দিনটা আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো। রহমতের বৃষ্টির কারণে আমরা এক ধরনের স্বস্তি নিয়েই শিশুমেলায় এসেছি। তবে শিশুমেলায় প্রবেশের বিষয়ে একটা নিয়মনীতি করা জরুরি। ছোট জায়গায় লোকজন অনেক বেশি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। মূলত বিমান বাহিনীর ঐতিহ্য, ইতিহাস, সাফল্য, মুক্তিযুদ্ধে অবদান তুলে ধরতেই এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু। ঈদের দ্বিতীয় দিন এখানে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। ৫০ টাকার টিকিট কিনে ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে। সেখানে নানা ধরনের বিমান দেখছেন বিনোদনপ্রেমীরা। বিমান জাদুঘরের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে সামনের সড়কে জটলা দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দলে দলে মানুষ জাদুঘরে প্রবেশ করছে। বেশিরভাগই পরিবারের সঙ্গে এসেছেন। টিকিটের লাইনের পাশে পরিবারের অন্য সদস্যদের রেখে, যে কোনো একজন টিকিট কিনছেন। সাধারণ মানুষের জন্য এখানে টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা। তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য টিকিট লাগছে না।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের প্রবেশ করতে হাজারও বিনোদনপ্রেমীর ভিড় দেখা গেছে। এখানে প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বিভিন্ন অর্জন ও গৌরবময় ইতিহাস এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
যারা অনলাইনে টিকিট না কিনে এখানে এসেছেন, তাদের হতাশ হতে দেখা গেছে। এখানে সশরীরে টিকিট কেনা যাচ্ছে না। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকছে এটি। দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। তবে বিদেশিদের জন্য ৫০০ ও সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের গুনতে হবে ৩০০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের পশ্চিম পাশে ১০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এ জাদুঘর। জাদুঘরে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জাম উপস্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর গ্যালারির পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তি মিশন গ্যালারি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিরক্ষা গ্যালারি রয়েছে এখানে।
ঔপনিবেশিক যুগ, মধ্যযুগ, বাংলার সামরিক ঐতিহ্য, বাঙালির জনযুদ্ধের ইতিহাসসহ নানা ইতিহাস জানা যাবে এখান থেকে। আর্ট গ্যালারিসহ মাল্টিপারপাস এক্সিবিশন গ্যালারি, ব্রিফিং রুম, স্যুভেনির শপ, ফাস্ট এইড কর্নার, মুক্তমঞ্চ, থ্রিডি সিনেমা হল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, কফি শপ, আলোকোজ্জ্বল ঝরনা, ভার্চুয়াল অ্যাকুয়ারিয়ামের দেখা মিলবে এ জাদুঘরে।