নগর সংবাদ।।অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় লিবিয়ার হিট স্টোকে মাদারীপুর নিবাসী ৫ বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় লিবিয়ার ভুমধ্যসাগরে হিট স্টোকে মাদারীপুর নিবাসী ৫ বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে একই বোটে ইতালিগামী বেঁচে যাওয়া আরেক বাংলাদেশি যুবক হৃদয় মিয়া। গতকাল রবিবার (২৫ জুলাই) রাতে নিহতদের পরিবারের কাছে সে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিহতরা হলেন- মাদারীপুর নিবাসী হৃদয় কাজী (২২), সাগর সিকদার (২৩), জিন্নাত শেখ (২৫), সাধন মল্লিক (২৪) এবং সজিব মুন্সী (২০)। মৃত যুবকদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় আদরের সন্তানকে হারিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এই ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। নিহতদের স্বজনরা জানান, তিন মাস আগে দালালদের খপ্পরে পড়ে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যুবকরা লিবিয়ায় আটকা পড়েন। গত ১৯ জুলাই লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দালালরা ইতালীর উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করে তাদের। অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাটির ইঞ্জিন ভূমধ্যসাগরে নষ্ট হয়ে গেলে তারা ৪ দিন সাগরে উদ্দেশ্যহীন ভাসতে থাকে। এতে প্রচন্ড রোদ ও গরমে হিটস্টোকে প্রাণ হারায় তারা। একই বোর্টে থাকা হৃদয় মিয়াসহ আরও ৫/৬জন অসুস্থ হয়ে পড়লেও হৃদয় মিয়া ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। পরে তিউনেশিয়া উপকূলে পৌছুলে সে দেশের নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড জীবিতদের উদ্ধার করে তিউনেশিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। কিছুটা সুস্থ হলে হৃদয় মিয়া গতকাল রোববার রাতে ফোন করে বলেন, ঘটনার দিন প্রথমে হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা যায়। আর সাগর সিকদার, জিন্নাত শেখ, সজিব মুন্সী ও সাধন মল্লিক নিখোঁজ থাকার পর খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি তারাও মারা গেছে। আমরা তিউনেশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছি। মৃত জিন্নাত শেখের মা হালিমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, রাজৈর উপজেলা সত্যবর্তী গ্রামের দালাল রেজাউল শেখ ও শহিদুল মোল্লা আমার ছেলেকে ইতালি পৌছে দিবে বলে কয়েক দফায় নগদ ১১ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তারপরও আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। তপারকান্দি গ্রামের মৃত সজিব মুন্সীর মা শাহানা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে সজিবের সাথে সর্বশেষ আমার সাথে ১৮ জুলাই ফোনে কথা হয়েছে। তখন আমার ছেলে আমাকে বলছিল মা আমার জন্য দোয়া করো আমাকে এখন দালাল গেম ঘরে নিবে। এর পর আর কথা হয়নি। কয়েক দফায় সত্যবর্তী গ্রামের দালাল শাহিন সরদার আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরও আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমি এর বিচার চাই। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের মানব পাচারচক্রের সদস্য ইলিয়াছ ফকির, টুটুল ফকির এবং রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের শাহিন সরদার, রেজাউল শেখ, শহিদুল মোল্লা, ইলিয়াছ শেখ ও শ্রীরামপুরের লিটন মোল্লা ইতালি যাবার স্বপ্ন দেখিয়ে ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে কয়েক দফা আদায় করে সাড়ে ৭ লাখ থেকে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত। ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি এসব পরিবারের। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন মৃতদের স্বজন ও এলাকাবাসী। রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।