নগর সংবাদ।।রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন মাহিদুল ইস’লাম। বেতন পান ৩০ হাজার টাকা। তিনি মা’র্চ মাসের পর আর পূর্ণ বেতন পাননি। এপ্রিলে পেয়েছিলেন অর্ধেক বেতন আর মে মাসের বেতন এখনো পাননি। দুই মাসের বাড়িভাড়া বকেয়া পড়ে আছে। ঈদের সময় স্ত্রী’-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে রেখে এসেছেন। করো’না পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তাদের আর ঢাকায় আনবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মাহিদুল ইস’লাম বলেন, ‘১২ হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিতে হয়। আর বাকি টাকা দিয়ে সংসার চলে যায়। কিন্তু এখন বেতনই পাচ্ছি ১৫ হাজার টাকা। তাহলে সংসার কিভাবে চলবে? আগামী মাস থেকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিয়েছি।’ শুধু মাহিদুল ইস’লাম নন, রাজধানীর অনেক বেসরকারি চাকরিজীবীর একই অবস্থা। চরম সংকটে পড়েছেন তাঁরা। বাড়িভাড়া দিতে না পেরে অনেকেই তাঁদের পরিবার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই কম টাকার বাসায় উঠছেন। আবার কেউ কেউ একেবারেই গ্রামে ফিরে গেছেন। অনেক বাড়িওয়ালাও ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। যাঁদের বাড়ি খালি হয়েছে তাঁরা ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। রাজধানীর পান্থপথে একটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি দুটি ভবন ভাড়া নিয়ে কাজ করে আসছিল। নাম প্রকাশ না করে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, ‘আমা’র ব্যবসার অবস্থা খা’রাপ। তাই ছোট ভবনটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা কোনোভাবেই আমাকে ছাড়বেন না। বাড়িওয়ালা বলেছেন, কয়েক মাস ভাড়া না দিলেও তাঁর সমস্যা হবে না। মে মাস থেকে আমি একটি ভবনের ভাড়া দিচ্ছি না। কর্মীদেরও বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছি।’ দেশে তিন মাস ধরে করো’না সংক্রমণ চলছে। এর মধ্যে ৬৬ দিন ছিল সাধারণ ছুটি। এ সময়ে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস ও বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্যই বন্ধ ছিল। ফলে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বেসরকারি চাকরিজীবীরা। আর করো’নার পুরো তিন মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক’ষ্টে আছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। অনেকাংশেই আয় কমেছে শ্রমজীবীদের। আগের মতো কাজ নেই। এ ছাড়া অনেক দোকান ও মা’র্কেট বন্ধ থাকায় কর্মচারীরাও বেতন পাচ্ছেন না। তবে ভালো আছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। অফিসে যেতে না হলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তাঁরা। এমনকি তাঁরা করো’নায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনায় করো’নার প্রভাবের চিত্র উঠে এসেছে। গত ৭ জুন সিপিডি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, করো’নার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জ’রিপ ২০১৬ অনুযায়ী তখন দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে অনুমিত হিসাবে তা নেমে আসে সাড়ে ২০ শতাংশে। সিপিডি বলছে, করো’নার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের আয় কমেছে। ফলে দারিদ্র্যের হারও বেড়ে গেছে। করো’নার কারণে ভোগের বৈষম্য বেড়ে দশমিক ৩৫ পয়েন্ট হয়েছে। সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, করো’নাভাই’রাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির প্রভাবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় ৭৯ শতাংশ কমেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো রকমে তিন বেলা খেতে পারলেও পুষ্টিমান রক্ষা করতে পারছে না। করো’নার প্রভাবে ধস নেমেছে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক খাতে। বিশ্ববাজারে ৩১৮ কোটি ডলারের বেশি ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবিকা এবং ৩৫ বিলিয়নের মতো রপ্তানি আয় নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্পে আয় কমেছে ১৯ শতাংশ। ঢাকার সাভা’র ও আশুলিয়ায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের হিসাবে এ পর্যন্ত পাঁচ-সাত হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মা’মলা প্রত্যাহার, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল, বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা এরই মধ্যে কয়েক দফায় সাভা’র ও আশুলিয়ায় মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের ৪৬১ কারখানায় এখনো শ্রমিকদের মে মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। শুধু পোশাক খাত নয়, বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই চলছে। প্রবাসী আয়ও কমতে শুরু করেছে, যার উপর নির্ভরশীল নিম্নমধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ। করো’না সংকটের কারণে চাকরি হারিয়ে প্রবাস থেকে লাখ লাখ কর্মীর ফিরে আসার আশ’ঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবীরা শ’ঙ্কায় দিন কা’টালেও সরকারি চাকুরেদের জন্য গ্রেডভেদে প্রণোদনা আছে ৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয়, সরকারি চাকুরেদের জন্য সুখবর আছে প্রস্তাবিত বাজেটেও। আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে তাঁদের জন্য বাড়তি বরাদ্দ থাকছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ আছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সেটা দাঁড়াচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। করো’নার কারণে ১ম-৯ম গ্রেডের কোনো কর্মক’র্তা মা’রা গেলে পেনশন সুবিধার বাইরেই তাঁর পরিবার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাবে। এর মধ্যে করো’নার কারণে বিশেষ প্রণোদনা ৫০ লাখ, চাকরিকালীন অবস্থায় মৃ’ত্যুর জন্য আট লাখ, ১৮ মাস পর্যন্ত ল্যাম্প গ্রান্ট, কল্যাণ তহবিল থেকে গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের টাকা, লা’শ দাফনের জন্য পৃথক অনুদান, কল্যাণ তহবিল থেকে পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা ইত্যাদি নানা সুবিধা রয়েছে। প্রণোদনার বাইরে বেশির ভাগ সরকারি চাকুরেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে কাজ করতে হচ্ছে না। গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খুললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অফিসগুলোতে অ’ত্যন্ত কমসংখ্যক চাকুরেকে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এমনকি গাড়ি ব্যবহার না করেও উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মক’র্তারা মাসে মাসে এ বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে খরচ পাচ্ছেন। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। করো’না পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও##