অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতির পর জনপ্রশাসনে আবার দুই স্তরের পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ দফায় উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হবে। পদোন্নতির সুপারিশ করতে আগামী মাসেই সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) বৈঠক শুরু হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস মিলেছে। সূত্রমতে, যুগ্ম সচিব পদে বিসিএস ২৪তম ব্যাচ এবং উপসচিব পদে ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে গণ্য করতে যাচ্ছে পদোন্নতির জন্য সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ এসএসবি। এই দুই স্তরে পদোন্নতির তালিকা তৈরি করতে প্রশাসনের কমবেশি ৬০০ কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করবেন এসএসবির সদস্যরা। এ ছাড়া আগের বঞ্চিত অর্ধশত কর্মকর্তার তথ্য-উপাত্তও যাচাই করা হবে। ফলে এ মুহূর্তে এসএসবির টেবিলে আছে অন্তত ৬৫০ কর্মকর্তার নথি বা আমলনামা। পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদোন্নতি প্রশাসনের নিয়মিত কাজ। যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসএসবি পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতে শিগগির বৈঠক শুরু করবে। তবে সময় লাগবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রশাসনে একধরনের স্বস্তি ফিরে আসে। যোগ্যতা অর্জনকারী কর্মকর্তারা পদোন্নতির জন্য ধরনা দিতে থাকেন সংশ্লিষ্ট বড় কর্তাদের দপ্তরে। সরকার গঠনের এক সপ্তাহের মাথায় ১৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দিতে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তার তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়। ২২ এপ্রিল প্রশাসনের ১৩০ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয় সরকার। এবার যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলাসহ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এবং পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যুগ্ম সচিব: ইকোনমিক ক্যাডারের নতুন ৫৪টি পদসহ যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ কমবেশি ৫০০। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জিইএমএস তথ্য অনুযায়ী, এসব পদে কর্মরত আছেন ৭৭৯ জন। পদ খালি না থাকলেও সরকারকে পদোন্নতি দিতে হচ্ছে। এবার নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বিসিএস ২৪তম ব্যাচকে। এই ব্যাচ ২০০৫ সালের ২ জুলাই চাকরিতে যোগ দেয়। শুরুতে এই ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারে ৩৩৬ জন কর্মকর্তা যোগ দিলেও চাকরির ২০ বছর পর যুগ্ম সচিব হয়েছেন ৩০৮ জন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন এখনো পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের ১৯ কর্মকর্তাসহ এ ব্যাচের পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৩১৭ জন। যুগ্ম সচিব হতে উপসচিব পদে অন্তত ৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু এই ব্যাচের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কাজ করছেন ৬ বছরের বেশি। ফলে তাঁদের পদোন্নতির জন্য সরকারের আর্থিক সংশ্লেষের প্রয়োজন হবে না। কারণ, ইতিমধ্যে ওই কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিবের স্কেলে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বিসিএস ২৪তম ব্যাচ প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের কর্মকর্তারা ৬ বছর ৩ মাস ধরে উপসচিব পদে কাজ করছেন। তাঁদের অধিকাংশই বর্তমানে যুগ্ম সচিব স্যারদের সমান বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ফলে আমাদের পদোন্নতি হলে সরকারের কোনো আর্থিক খরচ হবে না। এ বছর প্রায় ১০০ যুগ্ম সচিব স্বাভাবিক অবসরে যাবেন। ফলে অনেক পদ খালি হবে। তাই আমরা চাই, যোগ্য, মেধাবী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের এবার পদোন্নতি হবে।’ উপসচিব: প্রশাসনে ৪৩০টি সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭০৩ জন। অর্থাৎ পদের চেয়ে ২৭৫ জন বেশি আছেন। এ পদে বিসিএস ৩০তম ব্যাচের ২৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ২৭১ জন পদোন্নতিযোগ্য। এ ছাড়া বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের ২০ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এই ব্যাচে। ফলে এই পদে পদোন্নতিযোগ্য মোট ২৯১ জন। পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব হিসেবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। ৩০তম ব্যাচের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ৩ জুন তাঁদের চাকরির এক যুগ পূরণ হবে। তাই তাঁরা চান এই ব্যাচের যোগ্য কর্মকর্তাদের উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি।