২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এর আগে পাঠ্যবই ছাপা শেষ করা সম্ভব নয়-মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ।
ঢাকা প্রতিনিধি।। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির অফিসিয়াল প্যাডে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি চিঠি লেখেন সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এর আগে পাঠ্যবই ছাপা শেষ করা সম্ভব নয়।’ একই সঙ্গে টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বই জানুয়ারিতে সরবরাহের শর্ত রহিত করা এবং পুস্তক মুদ্রণের আগে আংশিক বিল পরিশোধের দাবি জানান তিনি। রোববার (২২ ডিসেম্বর) এ চিঠি দেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান মাহফুজ। চিঠির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তাদের ওপর চাপ আসতে থাকে। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে এনসিটিবি কর্মকর্তাদের পরামর্শে রাতে আবার শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি লেখেন মুদ্রণ সমিতির এ নেতা। তাতে ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোয়’ ও ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ’ করায় জাতির কাছে ক্ষমা চান তিনি। মুদ্রণ শিল্প সমিতির অফিসিয়াল প্যাডে এমন আবেদন করার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন সমিতির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক। তারাও এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন। মুদ্রণ সমিতির নেতাদের চিঠি দেওয়া ও পরক্ষণে ক্ষমা চাওয়ার এমন কাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি জানতে মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান ও আবেদনকারী জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তার নম্বর বন্ধ ছিল। তার ক্ষমা চাওয়ার চিঠিটি নগর সংবাদ এর হাতে এসেছে। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী আবেদন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করায় জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভবিষ্যতে এমন জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিসয়ে আবেদন কিংবা বক্তব্য প্রদানে অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণ করবো।’ জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘তারা কেন এমন চিঠি লিখেছেন তা আমি বলতে পারবো না। তারা চিঠি লিখেছেন, আবার ক্ষমাও চেয়েছেন। বিষয়টি আমরা অবগত। আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত বই ছাপার কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। সরকারের এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আবেদনে যা লেখেন মুদ্রণ সমিতির নেতা শিক্ষা উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির ১৩০ জন সদস্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রকাশিত বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ইবতেদায়ি, দাখিল, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ হতে দশম শ্রেণি), ভোকেশনাল, কারিগরি স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের কাজ করছে। এ বছর পূর্বের কারিকুলাম বাতিল হওয়ায় প্রায় সব টেন্ডারের রি-টেন্ডার হয়। আগের বছরগুলোতে সাধারণত জুলাই থেকে পাঠ্যপুস্তক ছাপা শুরু হতো এবং প্রায় ৭ মাস ধরে কাজ চলতো, যা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যেত।’ এবার ২০১২ সালের কারিকুলামে ফেরত যাওয়ায় টেন্ডার আহ্বান করে নোয়া (নোট অব অ্যাওয়ার্ড) পেতে প্রায় নভেম্বর মাস লেগে যায়। আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ১৪ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় টেন্ডারের ৯ ডিসেম্বর, প্রাক-প্রাথমিকের ১৯ নভেম্বর, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৯ ডিসেম্বর, ষষ্ঠ শ্রেণির ২৫ নভেম্বর, সপ্তম শ্রেণির ২৫ নভেম্বর, অষ্টম শ্রেণির ৯ ডিসেম্বর, নবম শ্রেণির ১৯ নভেম্বর এবং ইবতেদায়ি (চতুর্থ, পঞ্চম) ও দশম শ্রেণির ১৯ ডিসেম্বর নোয়া পেয়েছি। এতে আরও লেখা হয়, ‘নবম, দশম শ্রেণির নোয়া অনুসারে আমরা চুক্তি করার শেষ তারিখ আগামী ১৬ জানুয়ারি। সে হিসেবে আমাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু যেহেতু বইটি আমাদের কারও সন্তান, কারও ভাই-বোনের জন্য তাই আমরা চুক্তির মেয়াদের সর্বশেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে চুক্তি করতে চাই।’ ‘এ পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি বই মুদ্রণ, বাঁধাই সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৩৮ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য ২০/৩০ সাইজের মুদ্রণযন্ত্র দরকার। বাংলাদেশে ৩৩০টির মতো ২০/৩০ সাইজের মুদ্রণযন্ত্র রয়েছে। তাছাড়া কিছু শাট মেশিন অল্প পরিমাণে এ বই ছাপানো যাবে। সমগ্র বাংলাদেশের সব প্রেসের মিলিত সক্ষমতা প্রতিদিন ৪০ লাখ বই মুদ্রণ করা সম্ভব (যদি ২৪ ঘণ্টা কাজ করে)। এ অবস্থায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান যারা সবাই আমাদের সমিতির সদস্য, তাদের অনুরোধে আপনার কাছে বিনীত আবেদন আমরা সব শ্রেণির তিনটি করে পাঠ্যপুস্তক আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে মুদ্রণ, বাঁধাই সম্পন্ন করে সব উপজেলায় পৌঁছে দেবো। যাতে কোনো একটি শিক্ষার্থী বই ছাড়া না থাকে। অবশিষ্ট বইয়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই আমরা ৫ মার্চের মধ্যে মুদ্রণ, বাঁধাই সম্পন্ন করে উপজেলায় পৌঁছে দেবো। বাকি ২০ শতাংশ বই অর্থাৎ, ফিনিশিং বুক ২৫ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করে দেবো। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখ্য যে, এনসিটিবির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে বই দিতে গেলে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দিতে দেরি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের তিনটি করে বই দিলে এনসিটিবি বিধান অনুসারে চুক্তিতে উল্লেখিত পাঠ্যপুস্তকের ৫০ শতাংশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরবরাহ করার জন্য একটি বাধ্যবাধকতা আছে। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে এ বিধানটি রহিত করা অতীব জরুরি। তা না হলে প্রেস মালিকদের অনেক জরিমানা হবে। যেহেতু ব্যাংকগুলো থেকে আমাদের প্রেস মালিকরা পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না, তাই দ্রুত বই সরবরাহের স্বার্থে তিনটি করে বই সরবরাহের পর আংশিক বিল (সরবরাহকৃত তিনটি বইয়ের বিল) প্রদান অতীব জরুরি।