মে দিবসের স্বার্থকতা তখনই সম্ভব যখন শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে
nagarsangbad24
-
প্রকাশিত: মে, ১, ২০২৫, ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
-
৭ ০৯ বার দেখা হয়েছে
মে দিবসের স্বার্থকতা তখনই সম্ভব যখন শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে
- একজন মালিক সে তার মেধা, শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। সেই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের ছোঁয়ায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে। শ্রমিকশ্রেণি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড এবং তারাই এমন ব্যক্তি যারা তাদের নিরলস শ্রম বিলিয়ে দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই শ্রমিক সমাজ তাদের অধিকার দাবী আদায়ে এখনো সংগ্রাম করে চলছে। অধিকার আদায়ের শুরুর কথা বলতে গেলে বলতে হয় ১৮৮৬ সালের ১লা মে মালিক কর্তৃক সাধারণ শ্রমিকদের উপর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যার কথা। যা ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। পরবর্তীতে ১লা মে’কে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। যা এখন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে সারবিশ্বে মর্যাদা পায়। এবং যথাযথ মর্যাদার সাথে সারাবিশ্বে শ্রমিক দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। মহান মে দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গেলে আমরা জানি ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন অনেক শ্রমজীবি মানুষ। সেই আত্মদানের পথ ধরেই পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবি তুলে এখনো আন্দোলন করে চলছেন। শুধু মালিকপক্ষই নয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির পেছনে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের এই উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে হলে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মালিক পক্ষকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কখনো শিল্প এগোতে পারে না। কিন্তু অনেক মালিক পক্ষ শ্রমিকদের চরমভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকে। অনেক শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিকাঠামো থাকলেও মালিক পক্ষ বাস্তবায়ন করছে না বলেও অভিযোগ উঠে আসে। দেশের চলমান দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাপনের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কিন্তু তা না হবার কারণে ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকদের বিভিন্ন সময়ে নানাধরণের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায়। এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক হামলা মামলা, জেল-জুলুম ও চাকুরীচ্যুতের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিক ও মালিক শ্রেণির মধ্যে সুসম্পর্ক ও সমন্বয় করতে দেশী বিদেশি সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে জাতিসংঘের নিবন্ধিত আন্তর্জাতিক ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)। বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর এর পরিচালনাধীন কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শ্রম কল্যাণ সংস্থা, ইন্ডাস্টিয়াল পুলিশ। এদের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিক সমন্বয় দ্বায়িত্ব পালন করে চলছেন ভেবজা, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ ও বিটিএমইএ। এছাড়াও বিভিন্ন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের গড়ে ওঠা সংগঠনগুলো। বাংলাদেশের শ্রমজীবি মানুষের অধিকারের দাবি নিয়ে ও শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে চলছেন বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাদের বাহিরেও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ব্লাস্ট, বিল্স, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন। এদের বাইরেও কাজ করে চলছেন মানবিক ও সমাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শ্রমিকবান্ধব মানবাধিকার সংগঠন ও শ্রমিক জাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশে মে দিবস পালন তখনই সার্থক হবে, যখন শ্রমিকদের সব ধরনের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত রাখা যাবে। শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। তবে মালিকদের মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ বা বাড়তি মুনাফা করা যাবে না। ঠিক তেমনি শ্রমিক সমাজকে মালিকের কথা চিন্তা করে মালিকের প্রতি মানবিক হতে হবে। অনৈতিক কিছুর দাবী নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করা যাবে না। সকলের মনে রাখতে হবে কাউকে ছাড়া কেউ পূর্ণ নয়। মালিক ও শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, আর শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে। পরিশেষে দেশ ও বর্হিবিশ্বে কর্মরত সকল শ্রমিক ভাইবোনদের প্রতি জানাই মহান মে দিবসের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। এবং বিগত দিনগুলিতে কর্মস্থলে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে ও অধিকারের দাবীতে যে সকল শ্রমিক ভাই বোন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সকলকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মে দিবসে শ্রমিকদের কথা ভেবে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে ভ্রাতিত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক ও মালিকের ইতিবাচক সম্পর্কই শিল্প উন্নয়ন সম্ভব। এই উন্নয়নই আগামীর বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করবে।
এ বিভাগের আরও খবর...